আজকে, যাঁরা সকাল সকাল গুগল করে দিন শুরু করেন, তাঁদের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে যে আজ নাকি কিং জেমস বাইবেলের জন্মদিন। অর্থাৎ, বাইবেল—যেটা আমরা ইংরেজি ভাষার এক ক্লাসিক্যাল অভিভাবক হিসেবে জানি—তার জন্মদিন আজ! কিন্তু খবরটা একটু ফেক-ফেক গন্ধ ছড়াচ্ছে। এবং ফেক ছড়ানোটা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার কাজ নয়, বাইবেলের ক্ষেত্রেও কেউ কেউ ‘রচয়িতা অজ্ঞাত’ লিখে নিজেদের দায় মিটিয়ে নেন।
প্রিন্সটনের থিওলজিক্যাল সেমিনারির আর্কাইভ-রক্ষক ব্রায়ান শেটলার একেবারে পাদপিষ্ট ভাষায় বললেন, “এই মে মাসের ২ তারিখটা বাইবেলের অফিশিয়াল জন্মদিন বলে কোনও রেকর্ডে নেই। ১৬১১ সালেই শুধু নিশ্চিতভাবে বইটা ছাপা হয়েছে বলে জানা যায়। তাও একখানা ডায়েরিতে লেখা আছে—‘আমি নভেম্বরে কিনলাম’—এইরকম!” সে একেবারে ‘আজ বৃষ্টি নেই, কাল নাকি হবে’ গোছের পূর্বাভাস।
মানে বুঝতেই পারছেন, চারশো বছর পেরিয়েও আমরা ‘through a glass, darkly’ তত্ত্বে আটকে। কে যেন বলেছিল, “What is truth?” সে কথাটা এখন হোয়াটস্যাপ স্ট্যাটাসে দিলে কেউ সন্দেহ করবে না, কারণ সত্যি এই যে, সত্য বলে কিছু একটা ছিল—এখন সেটা ট্র্যাফিক সিগন্যালের মতো, লাল-সবুজ-হলুদ সব একসঙ্গে জ্বলছে।
তবে এটুকু পরিষ্কার, বইটি যখন ছাপা হল, তখন সেটা নতুন কিছু বলে ঘোষণা করা হয়নি। কেন? কারণ তাতে যে ‘নতুনত্ব’ আছে, সেটা অফিসিয়ালি ঘোষণা করলে ট্যাক্স বাড়ে, আর এডিটররা এমনিতেই শেক্সপিয়রের সঙ্গে যুগপৎ সময়ে বাস করে তেনাদের চাপে ছিলেন। ফলত, বাইবেলটা 'Bishop's Bible' এর রিভিশন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বললেন ফোলজার লাইব্রেরির এক সহকারী, ক্রিস ম্যাসেঙ্গেল। স্টেশনার্স কোম্পানির খাতায় নাম না থাকায় সরকারও খুশি, পাবলিশারও বেঁচে গেল।
২০১১ সালে যখন বইটির চতুর্থ শতবর্ষ উদ্যাপন হচ্ছিল, তখন এক কমিটি খাড়া হল, যাঁদের দায়িত্ব ছিল 'কবে' বললে কেক কাটা যাবে তা ঠিক করা। তারাই নাকি ক্যালেন্ডারে পিন দিয়ে বসালেন ২ মে। কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। কিন্তু কমিটি আছে, তাই কেকও আছে।
ভাবুন একবার—যে বইয়ের সত্য ও পবিত্রতার দাবি চারশো বছর ধরে সভ্যতা টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তার জন্মতারিখটাই ক্লু-লেস! জন্মদিনটা ম্যানুফ্যাকচারড, একেবারে কারখানায় বানানো। বাইবেল যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের প্রোফাইল পিকচার নেই, অথচ তাঁদের লেখা নিয়ে আমরা পোস্ট মার্টেম করছি।
তবে প্রশ্নটা অন্যখানে। ইতিহাস যখন ঘোলাটে, তখন কি সত্য ঝাঁলা-ঝাঁলা পড়ে যায়? সত্য কি ব্রায়ান শেটলারের গবেষণা, না কি গুগলের ডুডল? সত্য কি ১৬১১ সালের ডায়েরির হিজিবিজি হস্তাক্ষর, না কি একটা অ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেইনের তদ্বির? আসলে, সত্য বলে কিছু নেই—থাকলেও সেটা ন্যাপকিনে লেখা, যেটা কেক খেয়ে কেউ ফেলে দিয়েছে। বাকি শুধু মোড়কের গন্ধ।
আমরা জন্মদিন ভুলেও যদি কেউকে উইশ করি, সে যদি হাসিমুখে কেক খায়, তবে ভুলটা আর ভুল থাকে না। হয়তো ঈশ্বর নিজে তেমনি আমাদের তাকিয়ে হাসছেন—বলছেন, “ওরা জন্মদিন ভুল করছে, কিন্তু কেক খাওয়ার আনন্দে সত্যির থেকেও ভালো কিছু খুঁজে পেয়েছে।”
আর এটুকুই, ভাইবোনেরা, সত্যের পরম পরিহাস।