চার্লি কার্ক—আমেরিকার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একজন রিপাবলিকান কর্মী এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ডন জুনিয়রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আজ দুপুরে তিনি আততায়ীর গুলিতে খুন হয়েছেন। কে খুন করেছে, কেন খুন করেছে—এখনও জানা যায়নি। ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তাও অনিশ্চিত। তবে যা জানা যায়, তা হলো—ভয়ের যথেষ্ট কারণ আছে।
যখন কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আততায়ীর হাতে নিহত হন, তখন গণতন্ত্রের ভিত কেঁপে ওঠে।
গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল দর্শনই হলো রাজনৈতিক সহিংসতাকে রুখে দেয়া—নাগরিকদের মধ্যে গভীর মতভেদ নিরসনের উপায় খোঁজা, যেন রক্তপাতের পথে যেতে না হয়। এই ব্যবস্থা টিকে থাকে কেবল তখনই, যখন সব বড়ো গোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে প্রতিপক্ষও শান্তিপূর্ণ খেলার নিয়ম মানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই বিশ্বাস ভেঙে গেলে, গোটা কাঠামো ভেঙে পড়ে।
অতীতে আমেরিকার গণতান্ত্রিক ঐকমত্য এতটাই দৃঢ় ছিল যে আততায়ী হামলার পরও তা টিকে গেছে। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড যেমন সেই বন্ধনকে প্রবলভাবে পরীক্ষা করেছিল, কিন্তু ছিন্ন করতে পারেনি। আবার জন এফ. কেনেডির হত্যাকাণ্ড জাতিকে এক অভিন্ন শোক ও সংহতির মধ্যে বেঁধে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।
কিন্তু আজ আমেরিকার রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে, আর সহিংসতা সামলানোর বহু হাতিয়ার ভস্মে পরিণত হয়েছে। হয়তো এই ঘটনাই আমেরিকাকে ভেঙে দেবে না—কিন্তু সেটাই ঘটতে পারে, এই সম্ভাবনা অস্বীকার করার আর উপায় নেই।
আজকের দিনে গণতান্ত্রিক সমঝোতা অস্বীকার করা যায় না—এটি দুর্বল। দুই প্রধান দল ও তাদের সমর্থকেরা একে অপরকে আর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং অস্তিত্ব-হুমকি হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। সরাসরি রাজনৈতিক হত্যাকে সমর্থন করে এমন আমেরিকানদের সংখ্যা কম হলেও, উভয় দলের এক প্রান্তিক অংশ ক্রমশ শত্রুপক্ষকে আঘাত করার বৈধ উপায় হিসেবে সহিংসতার দিকে উন্মুক্ত হচ্ছে।
এমন মেরুকরণের পরিস্থিতিতে, যখন পারস্পরিক সহনশীলতার রেলিং ভেঙে ধুলোয় মিশে যায়, তখন নিয়ন্ত্রণ হারানোর সম্ভাবনাই প্রকট হয়ে ওঠে। ডানপন্থার শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যেই আগেভাগে এ হত্যাকাণ্ডের দোষ চাপাচ্ছেন “ডেমোক্র্যাট পার্টি”-র ওপর, এমনকি উদারপন্থী ও বামপন্থীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমনাভিযানের ডাক দিচ্ছেন। যদি ট্রাম্প সেই আহ্বান মেনে চলেন, তবে গণতন্ত্রকে যে সামান্য শ্রদ্ধাবোধ এখনো টিকিয়ে রেখেছে, তাও ছিন্নভিন্ন হবে। রাজনৈতিক সহিংসতার নতুন পর্ব তখন অনিবার্য হয়ে উঠবে। গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলার সহিংস পতন তখন ঘনিয়ে আসবে। কিন্তু এ সব কতটা সম্ভাব্য? আমি নিশ্চিত নই।
গত বছর সামারে ট্রাম্প যখন নির্বাচনী প্রচারণার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলার ভাঙনের যে চিত্র আমি এখন বললাম—তার প্রায় সবটাই তখনও সত্য ছিল। এমনকি প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা সঙ্গে সঙ্গেই দোষ চাপিয়েছিল ডেমোক্রেটদের ওপর। তবু সেই আততায়ী হামলা পরবর্তী সহিংসতার ঢেউ তোলে নি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও বিপন্ন করেনি।
এবারও হয়তো একইরকম কিছু ঘটতে পারে। নাও হতে পারে প্রতিশোধমূলক হামলা, দেখা নাও দিতে পারে কপি ক্যাট। ট্রাম্প প্রশাসনও হয়তো শেষ পর্যন্ত এটিকে রাজনৈতিক শত্রুদের ওপর দমননীতির অজুহাত হিসেবে কাজে লাগাবে না। ঐতিহাসিক ভাবে—আমেরিকায় অস্ত্রের অবাধ উপস্থিতি ও দলীয় ঘৃণার গভীরতা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক সহিংসতার মাত্রা বরাবরই আশ্চর্যজনকভাবে কম থেকেছে।
কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে মি. কার্ক অন্যদের গুলিবিদ্ধ হয়ে মরাকে কখনোই ট্র্যাজেডি বলে মনে করেননি। যত আমেরিকান রক্ত ঝরিয়েছে, যত প্রাণ গেছে বন্দুকের গুলিতে, সবই এক সেকেলে আর ভুলভাবে প্রয়োগ করা সংশোধনীর অজুহাতে টিকে থাকা—আর সেই সঙ্গে মোটা লাভ নিশ্চিত করার জন্য স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন, স্টার্ম, রুগার অ্যান্ড কোম্পানি, সিগ সাউয়ার, গ্লক, মসবের্গ, স্প্রিংফিল্ড আর্মরি, হেনরি রিপিটিং আর্মস, হেরিটেজ ম্যানুফ্যাকচারিং, রেমিংটন, টরাস, আর বেরেটার মতো কোম্পানিগুলোর। তাহলে মি. কার্ককে সম্মান জানিয়ে বলা যায়—“দুর্ভাগ্য, বন্ধু। থটস অ্যান্ড প্রেয়ার্স। কিন্তু তোমাকে যে গুলি ছিঁড়ে নিয়ে গেল, সেটা বানিয়ে কেউ না কেউ তো টাকা কামিয়েছে।”
এ বছর আমাদের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। আংশিক কারণ হলো, এবার আমরা মোকাবিলা করছি সরাসরি এক হত্যাকাণ্ড—এক ভয়ংকর হত্যা—যেখানে আগে ছিল কেবলমাত্র এক অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া ঘটনা। আংশিক কারণ, এখনো আমরা জানি না আততায়ী কে: ট্রাম্পের ওপর গুলিচালক যদি স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্ররোচিত হতো, তবে ২০২৪-এর পরিস্থিতিই ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারত।
কিন্তু প্রধান কারণ হলো, গত এক বছরে আমেরিকার গণতান্ত্রিক অবক্ষয় অনেক গভীর হয়েছে। অস্বীকার করা যায় না যে ট্রাম্প আমেরিকার নির্দলীয় রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করেছেন—আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সামরিক বাহিনী পর্যন্ত। এর ফলে ডেমোক্র্যাটরা ক্রমশই বিশ্বাস হারাচ্ছেন যে গণতন্ত্র তার শাসনামল টিকিয়ে রাখতে পারবে—রিপাবলিকানরা শান্তিপূর্ণ খেলার নিয়ম মানবে। জানুয়ারি ৬-সহ, আধুনিক আমেরিকান প্রজাতন্ত্রের কখনোই দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের মতো ভয়াবহ মুহূর্ত আসেনি।
তাই আমি নিশ্চিত হতে পারছিনা যে এ বারও সবকিছু গত বছরের মতো সহজভাবে কাটবে। সম্ভবত, কাটবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতাম, কাটবেই। কিন্তু এখন তা পারি না। আমাদের ব্যবস্থা এতটাই পচে গেছে, পারস্পরিক অবিশ্বাসে এতটাই ছিদ্র হয়ে গেছে, যে কেবলমাত্র গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাই আমাদের এ সংকট থেকে উদ্ধার করবে—এমন ভরসা রাখার আর কোনো উপায় নেই।