ফ্যাসিবাদ, রবীন্দ্রনাথ ও সৌম্যেন্দ্রনাথের চিঠি
প্যারিসের এক হোটেলঘর থেকে শান্তিনিকেতনে লেখা সতর্কবার্তা
ফ্যাসিবাদ, রবীন্দ্রনাথ ও সৌম্যেন্দ্রনাথের চিঠি
প্যারিসের এক হোটেলঘর থেকে শান্তিনিকেতনে লেখা সতর্কবার্তা
রিটন খান
১৯৩৩ সালের নভেম্বরের এক রাতে প্যারিসের অ্যাকাসিয়ার রোডের ছোট্ট এক হোটেলে বসে এক তরুণ কমিউনিস্ট বাঙালি তার বিশিষ্ট জ্যাঠামশাইকে চিঠি লিখছিলেন। হোটেল রিভিয়েরার সেই ঘর থেকে শান্তিনিকেতনের দিকে তার নজর, কিন্তু দৃষ্টি আসলে আটকে আছে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর। চিঠিটা সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের, লিখছেন রবীন্দ্রনাথকে। একদিকে ইউরোপীয় অভিজ্ঞতায় গড়ে ওঠা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতি, অন্যদিকে শান্তিনিকেতনের পরিমিত, উদার, কিন্তু অনেক সময় দ্ব্যর্থক প্রতিক্রিয়া; এই দুইয়ের সংঘর্ষই এই চিঠির কেন্দ্রে।
ইউরোপে ফ্যাসিবাদ ও এক বাঙালি কমিউনিস্ট
সৌম্যেন্দ্রনাথ ৩০‑এর দশকে ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিবাদী শাসন কাছ থেকে দেখেছেন; রাজনৈতিক নির্বাসিত, শ্রমিক সংগঠক আর কমিউনিস্ট কর্মীদের সঙ্গে মিশে তিনি বুঝেছেন এই রাজনীতি কেবল এক নেতা বা এক দলের নামে নয়, সম্পূর্ণ এক ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা। তার বাংলায় লেখা ফ্যাসিবাদ–সংক্রান্ত গ্রন্থ আর পত্রলেখায় ফ্যাসিবাদকে তিনি দেখেছেন সাম্রাজ্যবাদ, আক্রমণাত্মক জাতীয়তাবাদ আর মধ্যবিত্ত আতঙ্কের যৌথ ফসল হিসেবে; এমন ব্যবস্থা, যা সংগঠিত শ্রমরাজনীতিকে ধ্বংস করে জাতির নামে সম্পূর্ণ আনুগত্য দাবি করে।
নৈতিক আপত্তি বনাম কাঠামোগত সমালোচনা
রবীন্দ্রনাথ নিজে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের সমালোচক ছিলেন, কিন্তু তার ভাষা ছিল প্রায়শই নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও সভ্যতাগত—অর্থনৈতিক বা শ্রেণি‑বিশ্লেষণমূলক নয়। সৌম্যেন্দ্রনাথের চিঠি ঠিক এখানেই চাপ তৈরি করে: শুধুই নৈতিক আপত্তি কি ফ্যাসিবাদকে ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট, যদি সেই আপত্তি রাষ্ট্র, পুঁজির কাঠামো আর শ্রেণিসংঘাতের প্রশ্নকে না ছোঁয়?
সৌম্যেন্দ্রনাথ তাঁর চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের কিছু অবস্থান ও যোগাযোগের দ্ব্যর্থকতা নিয়ে সরাসরি আপত্তি তুলেছেন—ইতালীয় ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা, কিন্তু জার্মান প্রসঙ্গে কিছু মন্তব্য, অথবা নির্দিষ্ট কূটনৈতিক আলাপচারিতা, যা ইউরোপীয় কমিউনিস্টদের চোখে আপসের মতো দেখায়। এই অসঙ্গতিগুলোকেই তিনি রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করছেন।
ফ্যাসিবাদ কি অতীত
২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে এই চিঠি পড়লে অস্বস্তি থেকেই যায়, কারণ যে ধরনের অতিরাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদ, মধ্যবিত্ত নিরাপত্তা‑আকাঙ্ক্ষা আর “শত্রু বানিয়ে ঐক্য” তৈরি করার রাজনীতি সৌম্যেন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ করেছিলেন, তার ভিন্ন সংস্করণ আজও বিশ্বের নানা প্রান্তে কাজ করছে।
ফ্যাসিবাদকে তিনি কেবল ইউরোপীয় ঘটনায় সীমাবদ্ধ রাখেননি; স্পষ্ট লিখেছেন, একই প্রবণতা উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের ভেতরেও গজাতে পারে, যখন “জাতি” বা “দেশের মর্যাদা”র নামে ভিন্নমতকে দেশদ্রোহী বানিয়ে দেওয়া হয়। এই সতর্কবার্তাই আজকের বিভিন্ন গণতন্ত্রে জেগে ওঠা কর্তৃত্ববাদী মোড়ের সঙ্গে অস্বস্তিকরভাবে মিলে যায়।
রবীন্দ্রনাথকে পড়া
পরবর্তী সময়ে অনেক পঠন-পাঠনে রবীন্দ্রনাথকে একরৈখিক উদার মানবতাবাদী হিসেবে সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে, যেন তিনি সব সময়ই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নির্ভুল অবস্থান নিয়েছিলেন। বাস্তব রেকর্ড অনেক বেশি জটিল—তিনি কখনও ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করেননি, বরং সতর্কও করেছেন, কিন্তু তার কিছু মন্তব্য ও নীরবতা তরুণ বামপন্থীদের চোখে প্রশ্ন তৈরি করেছিল।
সৌম্যেন্দ্রনাথের চিঠি এক রাজনৈতিক নথি, ঘরের ভেতর থেকে এক সমালোচনার চর্চা—এক তরুণ ঠাকুর আরেক প্রবীণ ঠাকুরকে জবাবদিহির মধ্যে টেনে আনছেন। রবীন্দ্রনাথকে সত্যিকারের গুরুত্ব দেওয়া মানে এই নয় যে তাকে ভক্তির আড়ালে রেখে অপ্রশ্নিত রাখা, বরং আজও তার ও তার সমসাময়িকদের রাজনৈতিক দ্ব্যর্থকতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলা।
আমার লেখা যারা পড়েন তাদের প্রতি আহ্বান
যদি এই লেখাটা আপনার কাছে অর্থবহ মনে হয়, আর আপনি বাঙলা সাহিত্য‑ইতিহাস, বাম রাজনীতি আর আজকের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাগুলোকে এক ফ্রেমে দেখতে আগ্রহী হন, তাহলে এই নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন বা পরিচিত কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। পাঠকদের সমর্থনই আমাকে এমনসব আর্কাইভ, চিঠি আর উপেক্ষিত গ্রন্থ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে লেখালেখি করার সুযোগ করে দেয়।
যারা মূল চিঠিটি পড়তে আগ্রহী তাদের জন্য নিচের অংশটুকু।
ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথকে লেখা সৌম্যেন্দ্রনাথের চিঠি
Hotel Riviera, 5 Rue des Acacias, Paris 17c.
শ্রীচরণেষু রবিদা,
প্রফেসর লেভি-র কাছ থেকে Calcutta Review নিয়ে শান্তিনিকেতনে জার্মান ভাইস কনসাল নাৎসি মতবাদের উপর যে-বক্তৃতা দিয়েছে, সেই বক্তৃতার সারাংশ ও সেই বক্তৃতার সমর্থন করে তুমি যা বলেছ তা পড়ে দেখলুম। তুমি যা বলেছ সে সম্বন্ধে আমার নিজের মত জানাবার জন্যে আমি তোমাকে এই চিঠি লিখছি না। আমার মতামতের কোন দাম তোমার কাছে আছে বলে মনে করি না। তুমি নাৎসি মতবাদের সমর্থনের দ্বারা ইয়োরোপের ইন্টেলেকচুয়াল কেন্দ্রে তোমার বিরুদ্ধে যে তীব্র বিরুদ্ধতা জাগিয়ে তুলেছ সেই সম্বন্ধে তোমাকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যেই এই চিঠি লেখা। দুঃখ হয় মনে করে যে, তোমার আশেপাশে যেসব লোকেরা আছে, তাদের মধ্যে এমন একটিও লোক নেই যে ইয়োরোপের কালচার ও পলিটিকাল জীবনের সত্যি খবর রাখে ও যে তোমাকে এই সর্বনেশে ভুল থেকে বাঁচাতে পারত। তোমার বিরুদ্ধে যে-আক্রমণ গজিয়ে উঠেছে তার প্রধান point-গুলি হচ্ছে এই- প্রথমত, তুমি ইতালীয় ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছিলে। সে মত তুমি যদি না বদলে থাকো, তা হলে তুমি জার্মান ফ্যাসিজম, যা আজ নাৎসিজম নাম নিয়েছে, তার সমর্থন কোন মতেই করতে পারো না। এ কথা বলার কোন মানে হয় না যে তুমি ইতালীয় ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে, কিন্তু জার্মান ফ্যাসিজমের সপক্ষে। তোমাকে এরই মধ্যে unprincipled opportunist বলে অনেকে আক্রমণ শুরু করেছে। দ্বিতীয়ত, জার্মান নাৎসিজম Nationalism-এর জঘন্যতম rabid রূপ। তুমি এই নাৎসিজমের প্রশংসা না করা পর্যন্ত Nationalism-কে অস্বীকার করে এসেছ। তোমার নাৎসিজমের সমর্থন তোমার Internationalism ত্যাগ করার নামান্তর। তৃতীয়ত, ইহুদিদের উপর যে-অমানুষিক পাশবিক অত্যাচার নাৎসিরা করেছে ও করছে, জার্মান ভাইস কনসাল সেই পাশবিকতাকে রংচং করে যা বলেছে, তার বিরুদ্ধে একটি কথাও না বলায় লোকে ধরে নিতে বাধ্য হয়েছে যে তুমি racialism-এর সমর্থক। চতুর্থত, ইয়োরোপে যারা আছে তারা প্রত্যেকেই জানে যে যুদ্ধের কী প্রচণ্ড আয়োজন নাৎসিরা শুরু করে দিয়েছে। নাৎসি Nationalism-এর সমর্থন করে তুমি লোকেদের মনে এই ধারণা জন্মে দিয়েছ যে তুমি যুদ্ধের সমর্থক। পঞ্চমত, সমস্ত প্রসিদ্ধ লেখকদের বই পুড়িয়ে, প্রসিদ্ধ চিত্রকরদের ছবি নষ্ট করে যে-বীভৎস cultural reaction নাৎসিজম জার্মানিতে এনেছে, তুমি নাৎসিজমের সমর্থন করে সে cultural reaction-কে সমর্থন করেছ। এ কথা মনে রাখা দরকার যে, জার্মানিতে cultural জীবনের নেতৃস্থানীয় লোকেদের মধ্যে এমন একজনও কেউ নেই যে না জার্মানি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।
তোমার নাৎসিজমের সমর্থনের খবর এখনও ছড়িয়ে পড়েনি, কিন্তু আস্তে- আস্তে ছড়াচ্ছে। প্রথমত, Sylvain Levi Calcutta Review-তে তোমার মতামত পড়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি ভারতবাসীদের সে কথা এরই মধ্যে বলেছেন, অন্যদের যে বলেছেন কিংবা বলবেন, তাতে সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়ত, জার্মান ভাইস কনসাল বাহবা নেবার জন্যে জার্মান গভর্মেন্টকে নিশ্চয়ই জানিয়েছে, তার ফলে নাৎসি কাগজে তোমার মতামত উঠবে ও সকলে জানবে। এর ফল যে তোমার পক্ষে কত দূর অনিষ্টকর হবে তা তুমি বোধ হয় ধারণা করতে পারবে না ইয়োরোপে না এলে। ইয়োরোপের ও আমেরিকার মনীষীদের মধ্যে তুমি এমন একটাকেও দেখাতে পারবে না, যিনি নাৎসিজমের তীব্র প্রতিবাদ না করেছেন। তোমার উক্তির তীব্র প্রতিবাদ তো হবেই, শুধু তাই নয়, তোমার নামের সঙ্গে এই অপবাদ বরাবরের মতো জড়িয়ে থাকবে যে বর্তমান কালের সবচেয়ে পচা reaction-কে সমর্থন করেছ। আমার পলিটিকাল মতবাদ তোমার পলিটিকাল মত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বলেই আমি তোমায় এ বিষয়ে আগে লিখে সতর্ক করে দিইনি, কেননা তোমার মনে হওয়া বিচিত্র নয় যে যেহেতু আমি কমিউনিস্ট, সেই হেতু আমি আমার বিরুদ্ধ মতবাদের বিরুদ্ধে তোমার কাছে প্রোপাগান্ডা করছি। তার জন্যই আমি তোমাকে লিখিনি। মনে হচ্ছে হয়তো লিখলে ভালো করতুম। তোমাকে এই প্রচণ্ড ভুল থেকে বাঁচাতে পারতুম হয়তো। এ কথা তোমাকে জানানো দরকার মনে করি যে, ইয়োরোপে ও আমেরিকায় নাৎসিজমের যে-তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে ও হচ্ছে, তা শুধু কমিউনিস্টরাই করেনি। লিবারাল, ডেমোক্রাট, প্যাসিফিস্ট, ইন্টারন্যাশন্যালিস্ট, এমন একটি cultural কেন্দ্র নেই, যা প্রতিবাদ না করেছে। তাই জন্যে নাৎসিজমের বিরুদ্ধে ইয়োরোপ ও আমেরিকায় যে-বিরুদ্ধতা জেগেছে তাকে নিছক কমিউনিস্ট-বিরুদ্ধতা মনে করলে প্রচণ্ড ভুল করবে। এই গত ছয় মাস কম লজ্জা পেতে হয়নি যখন প্যারিসের cultural জীবনের বহু লোকের কাছ থেকে অনবরত শুনতে হয়েছে যে, সমস্ত পৃথিবীর এই দুঃসময়ে তুমি একেবারে চুপ করে আছো। পৃথিবীর সমস্ত দেশের মনীষীরা জোরগলায় তাঁদের মত জানিয়েছেন, শুধু তুমি চুপ করে আছো। গান্ধির কাছ থেকে কেউ কিছু আশা করেনি, কিন্তু তোমার কাছ থেকে তারা প্রতিবাদ আশা করেছিল। ভারতবর্ষের দিক থেকে মস্ত একটা সুযোগকে তুমি ব্যর্থ করে দিয়েছ। শুধু তা হলেও বা হত, এখন নাৎসিজমের সমর্থন করে তুমি তোমার Internationalism-কে এমন মারাত্মক ঘা দিয়েছ যে তাকে ভবিষ্যতে সত্যি প্রাণবন্ত বলে এ দেশে প্রতিপন্ন করা খুবই শক্ত হবে। তা ছাড়া, কুৎসিত সন্দেহ লোকের মনে এরই মধ্যে উঠেছে। সে নিয়ে একজন জিজ্ঞেস করেছিল যে নাৎসি গভর্মেন্ট তোমার ইস্কুলকে টাকা দিচ্ছে কি না? তোমাকে আমি সমস্ত ব্যাপারটা জানানো উচিত মনে করেই জানালুম। তোমাকে আর-একটি বিষয় আমি জানিয়ে দিতে চাই। আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে যে এই লোকটি তার স্বার্থসিদ্ধি করবার জন্যে তোমাকে এই মারাত্মক ভুল পথে চালিত করছে। এই লোকটি হচ্ছে ...। ... যে নাৎসি গভর্মেন্টের ঘুষ খেয়েছে তার সঠিক খবর আমি মিউনিখ থেকে পেয়েছি। ইতিমধ্যে তারকনাথ দাস আমার এক বন্ধুকে বলেছেন যে নাৎসিজমের উপর প্রবন্ধ লিখে সেই প্রবন্ধ কলকাতার জার্মান কনসালের মারফত বার্লিনে জার্মান foreign office-এ পাঠিয়ে দিয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে জার্মান গভর্মেন্টের দ্বারা নিমন্ত্রিত হয়ে জার্মানিতে আসার বন্দোবস্ত করা। এর মতো এত বড় নীচ প্রকৃতির লোক খুবই কম আছে। আমি তাকে খুব চিনি। বার্লিনে আমার বাড়িতে এসে আমাকে যে-সব কথা বলেছিল তা আমি দেশে ফিরে সকলকে জানিয়ে publicly ওকে অপদস্থ করব। আমি দু-চার দিন বাদে আঁদ্রে জিদ ও বারবুসের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তোমার বিরুদ্ধে মতবাদ খুবই জোট বাঁধছে। তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো। আমি তোমাকে সব ব্যাপারটা জানানো কর্তব্য মনে করে জানালুম। আমার এখানে বিবিধ কাগজগুলির কর্তাদের সঙ্গে যোগ আছে। যদি তুমি কোন Statement দিতে চাও, তা হলে আমাকে পাঠিয়ে দিতে পারো। আমি তৎক্ষণাৎ ছাপাবার বন্দোবস্ত করতে পারি। আমার অবস্থা হয়েছে ত্রিশঙ্কুর মতো। কমিউনিস্ট হিসেবে তোমার নাৎসিজমের সুখ্যাতির জন্য আক্রমণ করতে আমি বাধ্য, অথচ তোমাকে যখন এখানে আক্রমণ করছে তখন তোমার হয়ে দু-কথা না বলেও পারি না। আমি জানি principle-এর দিক থেকে বিচার করে দেখলে হয়তো আমি ভুল করি তোমার হয়ে দু-চার কথা বলে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে চুপ করে থাকতে পারিনে। দেশে শীঘ্রি ফিরে যাচ্ছি। যদি ছাড়া থাকি, তা হলে গান্ধিবাদকে তুমি বর্তমানে যে-প্রশংসা করেছ, তাই নিয়ে তোমার সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব হবে। আমার সমস্ত অভিযোগ জানাতে গেলে এ চিঠি পুঁথি হয়ে উঠবে। তাই দেশে ফেরা পর্যন্ত তা মুলতুবি রাখলুম। আশা করি, তোমার শরীর ভালো আছে। তুমি আমার প্রণাম নিও।
ইতি সৌম্য
প্যারিস, ১ নভেম্বর ১৯৩৩



