শহিদ কার্ক ও আমেরিকার রক্তলোলুপ ভবিষ্যৎ
শহিদরা সহিংসতাকে পবিত্র করে তোলে। তাঁরা এক রকমের রসায়ন—যেখানে নৈতিকতার অণুপরমাণু ওলটপালট হয়ে যায়। পাপই তখন ধর্মীয় কর্তব্যে রূপান্তরিত হয়। নৃশংসতা হয়ে ওঠে বীরত্ব, অপরাধকে বলা হয় ন্যায়বিচার।
চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড আমেরিকার ভেতরকার ভাঙনের এক নতুন, আরও প্রাণঘাতী পর্বের এক অশুভ সূচনা। বহুদিন ধরেই বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রে বিষাক্ত কথোপকথন, ঘৃণাভরা শ্লোগান, আর হুমকি একে অন্যের দিকে নিক্ষিপ্ত হচ্ছিল যুদ্ধক্ষেত্রের হাতবোমার মতো। কখনো তা বাস্তব রক্তপাতেও পরিণত হয়েছে—মিনেসোটার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের সাবেক স্পিকার মেলিসা হর্টম্যান ও তাঁর স্বামীর হত্যাকাণ্ড, কিংবা টানা দুইবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা—এইসব ঘটনাই প্রমাণ করে রাজনৈতিক ঘৃণার ধারাবাহিক রূপান্তরের। কিন্তু কার্কের হত্যাকাণ্ড যেন আরেক ধাপ এগিয়ে দিল সেই বিপজ্জনক প্রবাহকে, যেন সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা।
কার্ক ছিলেন এক আন্দোলনের প্রতীক—খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদে দাঁত-নখ গেড়ে থাকা এক তীব্র মতাদর্শ। আর এই হত্যাকাণ্ড তাঁকে পরিণত করেছে শহিদে। ইতিহাস জানে, শহিদ ছাড়া কোনো সহিংস আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। শহিদের রক্তই আন্দোলনের জ্বালানি। ফলে এখন সহিংসতার বিরুদ্ধে সামান্য দ্বিধা, দয়া বা করুণার প্রসঙ্গ তোলা, বোঝাপড়ার বা আলোচনার চেষ্টা করা—সবই শহিদের আত্মত্যাগকে অস্বীকার করার নামান্তর। কার্কের মৃত্যু তাই শুধু একটি প্রাণহানির ঘটনাই নয়; এটি আমেরিকার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক রণাঙ্গনে আরও ভয়াবহ মেরুকরণের প্রতিশ্রুতি, যেখানে করুণা হবে বিশ্বাসঘাতকতা, আর সংলাপ হবে অপরাধ।
শহিদরা সহিংসতাকে পবিত্র করে তোলে। তাঁরা এক রকমের রসায়ন—যেখানে নৈতিকতার অণুপরমাণু ওলটপালট হয়ে যায়। পাপই তখন ধর্মীয় কর্তব্যে রূপান্তরিত হয়। নৃশংসতা হয়ে ওঠে বীরত্ব, অপরাধকে বলা হয় ন্যায়বিচার। ঘৃণাকে গুণ, লোভ আর স্বজনপ্রীতিকে বলা হয় নাগরিক নৈতিকতা। হত্যাকে ঘোষণা করা হয় পুণ্যকর্ম, যুদ্ধকে তুলে ধরা হয় চূড়ান্ত নান্দনিকতার আসনে। এই অন্ধকার বাস্তবতাই সামনে এগিয়ে আসছে।
ওরেম, উটাহ—১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। চার্লি কার্ক যখন ইউটা ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখনই হঠাৎ গুলির শব্দ। আতঙ্কিত জনতা দৌড়ে পালাতে থাকে, চারপাশে বিশৃঙ্খলা। এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিক্রিয়াগুলো ছিল যেন আরও কঠিন। স্টিভ ব্যানন তাঁর ওয়ার রুম অনুষ্ঠানে বললেন, “আমাদের ইস্পাত কঠিন সংকল্প করতে হবে। চার্লি কার্ক যুদ্ধের শহিদ। আমরা এখন যুদ্ধাবস্থায় আছি।”
ইলন মাস্ক X-এ লিখলেন, “যদি ওরা (লিবারেল) আমাদের শান্তিতে থাকতে না দেয়, তবে আমাদের সামনে দুই পথ—লড়াই অথবা মৃত্যু।”
ম্যাট ওয়ালশ, ডানপন্থী ভাষ্যকার ও লেখক, তাঁর X পোস্টে লিখলেন, “পুরো ডানপন্থী শিবিরকে এক হতে হবে। এই অন্তর্দ্বন্দ্বের বাজে ঝগড়াঝাঁটি বন্ধ হোক। আমরা নরকের গহ্বর থেকে উঠে আসা অশুভ শক্তির মুখোমুখি। এখন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের সময় নয়। এটা অস্তিত্বের লড়াই—আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব এবং দেশের অস্তিত্বের লড়াই।”
এইসব উক্তি কেবল প্রতিক্রিয়া নয়, এগুলো ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ। সহিংসতাকে মহিমান্বিত করা, শহিদের রক্ত দিয়ে রাজনৈতিক পতাকা রাঙানো, আর যুদ্ধকে অবধারিত ভাগ্য হিসেবে ঘোষণা—এগুলোই এখন আমেরিকার ভাঙা আয়নায় প্রতিফলিত হচ্ছে।
চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন রাজনীতির ভাষ্য শুধু শোক বা নিন্দায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং উন্মোচিত হয়েছে এক ধরনের প্রতিশোধপরায়ণ, কর্তৃত্ববাদী উচ্চারণ। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্লে হিগিন্স ঘোষণা করলেন, তিনি তাঁর “কংগ্রেসনাল কর্তৃত্ব এবং বিগ টেক প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর সব প্রভাব খাটিয়ে” যাবতীয় পোস্ট বা মন্তব্যকারীদের আজীবন নিষিদ্ধ করবেন, যারা কার্কের হত্যাকে বিদ্রূপ করেছে বা তুচ্ছ করেছে। এখানেই শেষ নয়—হিগিন্সের হুমকি আরও বিস্তৃত। তিনি বললেন, এ ধরনের মানুষদের ব্যবসার লাইসেন্স কেড়ে নিতে হবে, পারমিট বাতিল করতে হবে, তাঁদের ব্যবসাগুলো কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। তাঁদের স্কুল থেকে বহিষ্কার করতে হবে, এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্সও বাতিল করতে হবে। তাঁর ভাষায়, “আমি কার্যত চরম বৈরিতার সঙ্গে এদের ক্যানসেল করব—এই অসুস্থ, দুষ্ট প্রাণীরা যারা চার্লি কার্কের হত্যাকে উদ্যাপন করেছে।”
এদিকে, কার্কের মৃত্যুকে ব্যবহার করলেন পালান্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জো লনসডেল। তাঁর বক্তব্যে ফুটে উঠল আরেক ধরনের শত্রু-নির্মাণের খেলা। তিনি দাবি করলেন, তথাকথিত “লাল-সবুজ জোট”—অর্থাৎ কমিউনিস্ট ও ইসলামপন্থীরা—পশ্চিমা সভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্য এক হয়েছে। আর এই হুমকির মোকাবিলায় তিনি প্রস্তাব দিলেন এক অদ্ভুত অ্যাপের: নাগরিকরা যেখানে অপরাধ বা হোমলেসদের ছবি আপলোড করলে তার বিনিময়ে “প্রপার্টি-ট্যাক্স ছাড়” পাবেন।
এই ঘোষণাগুলো একসঙ্গে বিবেচনা করলে দেখি—কীভাবে এক হত্যাকাণ্ডকে শোকের মুহূর্ত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পরিণত করা হচ্ছে নজরদারি, শত্রু-চিহ্নিতকরণ, আর দমননীতির নতুন কর্মসূচিতে। শহিদের রক্ত শুধু পতাকার রঙ বদলাচ্ছে না, বরং রাষ্ট্রের যন্ত্রপাতিকেও আরও কঠিন, আরও নির্মম রূপে ঢেলে সাজাচ্ছে।
ডানপন্থী কৌতুকাভিনেতা স্যাম হাইড, যাঁর X-এ প্রায় পাঁচ লাখ অনুসারী, ট্রাম্পের ঘোষণার জবাবে লিখলেন—“এখন সময় এসেছে তোমার অভিশপ্ত কাজটা করার এবং ক্ষমতা দখল করার... এখনই বা কখনও নয়।” তাঁর সেই পোস্টে তিনি সরাসরি প্রশাসনের সদস্যদের ও প্রাইভেট সামরিক কন্ট্রাক্টরদের ট্যাগ করেছেন—যেন উস্কানি নয়, সরাসরি আহ্বান।
অন্যদিকে, রক্ষণশীল অভিনেতা জেমস উডস সতর্ক করে লিখলেন—“প্রিয় বামপন্থীরা: আমাদের সামনে দুটো পথ—আলোচনা অথবা গৃহযুদ্ধ। তোমাদের দিক থেকে আরেকটা গুলি এলে আর এই বিকল্প থাকবে না।” এই টুইটটি প্রায় ২০,০০০ বার রিপোস্ট হয়েছে, দেখা হয়েছে ৪.৯ মিলিয়ন বার, আর ৯৬,০০০–এর বেশি লাইক পেয়েছে।
এসব শুধু বিচ্ছিন্ন প্রতিক্রিয়া নয়, বরং আমেরিকার কোটি কোটি মানুষের করতালি-তোলা ঘৃণাভাষ্যের প্রতিচ্ছবি। যে সমাজে ৩০ মিলিয়ন শ্রমিক শিল্পবিহীনতার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে, সেখানে ক্ষোভ, হতাশা, স্থানচ্যুতি আর বিচ্ছিন্নতা অনিবার্য। এই দগদগে শূন্যতা জন্ম দিয়েছে ষড়যন্ত্রতত্ত্বের, প্রতিশোধের নেশার, এবং সহিংসতাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পচনের পরিশুদ্ধি হিসেবে উদ্যাপনের প্রবণতা।
খ্রিস্টান ফ্যাসিবাদীরা—কার্ক ও ট্রাম্পের মতো—এই হতাশার উপর শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা ছাইকে উসকে দিয়েছে, আর এখন কার্কের হত্যার পর সেই আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে।
এখন সবচেয়ে বড় বিপদ তাঁদের ওপর, যাঁরা মূলস্রোতের এই বিকৃত ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের বুলি তোতাপাখির মতো আওড়ায় না—বিপ্লবী, শিল্পী, সমকামী, বুদ্ধিজীবী, গরিব, দুর্বল, অভিবাসনপত্রহীনরা। তাঁদেরকে সমাজ-দেহ থেকে “দূষিত অঙ্গ” হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, যাদের কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সব অসুস্থ সমাজের মতোই, এই আমেরিকাতেও তাদেরকে বলি দেওয়া হবে—অর্থহীন নৈতিক পুনর্জাগরণ আর হারানো মহিমা ও সমৃদ্ধি ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টায়।
সম্মান ও সমৃদ্ধির সেই কল্পিত অতীত—যা আসলে এক পুরাণের মতো আমেরিকার অবয়ব—ফিরিয়ে আনার বৃথা প্রচেষ্টায় সমাজকে ভেতর থেকে গিলে খাওয়া হচ্ছে। এই আত্মকেন্দ্রিক ভক্ষণকাণ্ডই ত্বরান্বিত করছে ভাঙন। সহিংসতার নেশা—কার্কের হত্যাকাণ্ডের পর যাদের প্রতিক্রিয়ায় এক ধরনের রক্তলোলুপ উল্লাস ছড়িয়ে পড়েছে—সেটি নিজেকে নিজেই খেয়ে ফেলে আগুনের ঝড়ে রূপ নেবে।
এই ক্রুসেডে শহিদ অপরিহার্য—এই মুহূর্তে যার নাম আমেরিকাকে “র্যাডিকাল লেফট” থেকে মুক্ত করার যুদ্ধ। শহিদকে ঘিরেই সাজানো হয় স্মরণানুষ্ঠান, পূজিত হয় রক্তের প্রতীক; অনুসারীদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় লড়াইয়ের ন্যায়পরতা আর দোষীদের বিশ্বাসঘাতকতা। ট্রাম্পও তাই করেছেন—১০ই সেপ্টেম্বর এক ভিডিও বার্তায় তিনি কার্ককে ঘোষণা করলেন “সত্য ও স্বাধীনতার শহিদ” হিসেবে, তাঁকে দিলেন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, আর নির্দেশ দিলেন রবিবার পর্যন্ত পতাকা অর্ধনমিত রাখার। এমনকি কার্কের কফিন এয়ার ফোর্স টু-তে করে ফিনিক্স, অ্যারিজোনা ফেরানো হবে—রাষ্ট্রযন্ত্রই যেন হয়ে উঠল এক বিশাল শবযাত্রার বাহক।
কার্ক ছিলেন উদীয়মান খ্রিস্টান ফ্যাসিবাদের এক পোস্টার বয়। তিনি প্রচার করতেন গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট থিওরি—যা বলে, লিবারেল বা “গ্লোবালিস্ট” শক্তি ইচ্ছে করে কালো অভিবাসীদের ঢুকিয়ে দিচ্ছে আমেরিকায়, শ্বেতাঙ্গদের প্রতিস্থাপনের ষড়যন্ত্রে। এভাবে স্বাভাবিক অভিবাসন প্রবণতাকে পরিণত করা হয়েছে ভয়ঙ্কর চক্রান্তে।
তাঁর ইসলামভীতি ছিল উন্মুক্ত। এক টুইটে লিখেছিলেন, “ইসলাম সেই তরবারি, যা দিয়ে আমেরিকার গলা কেটে দিচ্ছে বামপন্থীরা।” আরেক জায়গায় ঘোষণা করেছিলেন, ইসলাম “পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
এমন উক্তি আর মিথ্যা তত্ত্বই তাঁকে আজকের এই “শহিদোৎসব”-এর কেন্দ্রে ঠেলে দিয়েছে—যেখানে মৃত্যু শুধু শোক নয়, বরং রাজনীতির নতুন মঞ্চ।
ইউটিউবার মিস র্যাচেল যখন তাঁর কনটেন্টে সহজভাবে বললেন—“যিশু বলেছেন, ঈশ্বরকে ভালোবাসতে আর প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসতে”—তখন চার্লি কার্ক বিদ্রূপ করে জবাব দিয়েছিলেন, “শয়তানও তো অনেকবার শাস্ত্র উদ্ধৃত করেছে।” তারপর যোগ করলেন, “মিস র্যাচেল, আপনার বাইবেলটা হয়তো আবার খুলে দেখা দরকার, কারণ ওই একই শাস্ত্রের আরেকটা কম আলোচিত অংশ লেবীয় পুস্তক ১৮-এ স্পষ্ট বলা আছে, একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষের সঙ্গে শুতে পারবে না, আর করলে তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতে হবে।”
এইভাবেই কার্ক কেবল ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত করেননি, বরং রাজনৈতিক অর্জনগুলোও ধ্বংস করার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি সরাসরি ১৯৬৪ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্ট প্রত্যাহারের দাবি তোলেন এবং মার্টিন লুথার কিংসহ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতাদের হেয় করেছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তাঁর অবমাননা ছিল নগ্ন ও প্রকাশ্য। কৃষ্ণাঙ্গদের তিনি “প্রাউলিং ব্ল্যাকস” বলে চিহ্নিত করেছিলেন, যারা নাকি “শুধু মজা করার জন্য শ্বেতাঙ্গদের শিকার করে।” ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে তিনি সরাসরি দায়ী করেছিলেন আমাদের সমাজের বুনোট ধ্বংস করার জন্য।
২০২০ সালের নির্বাচন তিনি বারবার ট্রাম্পের কাছ থেকে চুরি হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন। আর তাঁর প্রফেসর ওয়াচলিস্ট ও স্কুল বোর্ড ওয়াচলিস্ট প্রকল্প ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তথাকথিত “র্যাডিকাল লেফটিস্ট” অধ্যাপক ও শিক্ষকদের শুদ্ধিকরণ কর্মসূচি।
সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল তাঁর উন্মুক্ত সহিংসতার প্রচারণা। তিনি দাবি করেছিলেন, টেলিভিশনে সরাসরি জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত—এবং সেটি শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে দেখানো উচিত।
এ যেন এক বিকৃত, উন্মাদ ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মুখোশ উন্মোচন—যেখানে শাস্ত্র, আইন, শিক্ষা আর ন্যায়বোধ—সবই পরিণত হয় ঘৃণা ও মৃত্যুর নাট্যমঞ্চে।
চার্লি কার্ককে ঘিরে যে দাবি ছড়ানো হয়েছে—তিনি নাকি মুক্ত মতপ্রকাশ ও স্বাধীনতার রক্ষক—তা নিছক প্রহসন। বাস্তবে তিনি দু’য়েরই শত্রু ছিলেন।
কার্ক ছিলেন ট্রাম্পপন্থী এক উন্মাদ উল্লাসকারী, যিনি ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের অন্তর্গত অতিরিক্ত পৌরুষবাদকে নিজের দেহে বহন করতেন। এটাই ছিল তরুণদের, বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের কাছে তাঁর প্রধান আকর্ষন। তিনি প্রচার করতেন—পুরুষদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। বন্দুককে তিনি ফেটিশে পরিণত করেছিলেন এবং ট্রাম্পকে বিক্রি করতেন এক আসল পুরুষ শক্তির প্রতীক হিসেবে।
তিনি লিখেছিলেন: “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে অনেক কিছু বলা যায়। কিন্তু তাঁকে কেউ কখনও নারীত্বের সঙ্গে যুক্ত করেনি। ট্রাম্প হলেন মধ্যমা আঙুল, যা এক বিশাল ‘ফাক ইউ’ নারীবাদী প্রতিষ্ঠানের প্রতি—যা তাঁর আগে কেউ কখনও চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখায়নি। মিডিয়ার বড় অংশ এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। তরুণরা ব্যর্থ হয়নি।”
কিন্তু ইতিহাস জানে, এর পর কী। আর তা সুখকর নয়। এখন কার্ক শহিদে উত্তীর্ণ—যে শহিদ গণতন্ত্র নিঃশেষ করতে আগ্রহীদের হাতে খুনের বৈধতা দিচ্ছে, যেমন তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। এই শহিদোৎসব ভেঙে দিচ্ছে রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতাগুলো, যা নাগরিকদেরকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে সামান্য রক্ষা করত।
কার্কের নাম, মুখচ্ছবি, স্মৃতি—সবই এখন ব্যবহৃত হবে একনায়কতন্ত্রের পথ দ্রুততর করার জন্য। আর এটাই ছিল তাঁর চাওয়া—ঘৃণার ধর্মীয় রাজনীতিতে নিজের মৃত্যু দিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় বৈধতা অর্জন।
শেষটা একটু হঠাৎ করেই টানতে হলো, তার জন্য দুঃখিত। এই বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার লিখতে চেষ্টা করব। কোনো ভুলত্রুটি থেকে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন—প্রুফরিড করার সময় পাইনি। তবে আশা করি ভাবনাগুলো অন্তত কিছুটা হলেও আপনাদের কাজে লাগবে বা চিন্তার খোরাক দেবে।
সবার জন্য ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা রইল।




Alok Chakrabarti wrote this to me in an email, so I am sharing it here.
"Your writing has sharpened greatly. You are a very good writer, analyst and a great source of knowledge. I learned a lot as I don't scan the various social media posts that are fueling discontent and hatred. I think that we are at the juncture of history when Germany faced the same type of problems in 1930s. In the end Germany paid a very high price and other nations suffered too. I worry what costs we would have to pay. I think that we will slide down further and then a change will take place. Meanwhile tighten your seat belts for the great fall to the abyss."