'ফেস উইথ টিয়ার্স অফ জয়: এ ন্যাচারাল হিস্টরি অফ ইমোজি' - কিথ হিউস্টন
কেইথ হিউস্টনের ফেস উইথ টিয়ার্স অফ জয়: এ ন্যাচারাল হিস্ট্রি অফ ইমোজি-যেখানে ইমোজির বিবর্তন, রাজনৈতিক অনুষঙ্গ এবং আমাদের যোগাযোগের জগতে তাদের প্রকৃত ভূমিকার অন্তর্দৃষ্টি মিলেছে।
বই পর্যালোচনা
রিটন খান
কিছুদিন আগে শুনে ফেললাম কেইথ হিউস্টনের ফেস উইথ টিয়ার্স অফ জয়: এ ন্যাচারাল হিস্ট্রি অফ ইমোজি—অডিওবুকের পুরোটা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার, কিন্তু 2x স্পিডে চালিয়ে আড়াই ঘণ্টার সামান্য বেশি সময়েই শেষ হয়ে গেল। দারুণ একটা বই, বিশেষত ভাষা নিয়ে যাদের কৌতূহল অগাধ। শুনতে শুনতেই মনে হলো, এই বইয়ের নোটটা ঝটপট লিখে রাখি—যতটা না রিভিউ, তার চেয়ে বেশি নিজের উপলব্ধি।
কেইথ হিউস্টনের ফেস উইথ টিয়ার্স অফ জয়: এ ন্যাচারাল হিস্ট্রি অফ ইমোজি বইটি ইমোজির জগৎকে এক নতুন আলোয় প্রকাশ করে। সর্বত্র ব্যবহৃত এই প্রতীকগুলির অপ্রত্যাশিত ব্যবহার, তাদের সীমিত ভাষাগত ক্ষমতা এবং জটিল সাংস্কৃতিক তাৎপর্য এখানে বিশ্লেষিত হয়েছে। স্টিভেন পুল একে বর্ণনা করেছেন “আকর্ষণীয়ভাবে অদ্ভুত ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত ইতিহাস” হিসেবে, যেখানে ইমোজির বিবর্তন, রাজনৈতিক অনুষঙ্গ এবং আমাদের যোগাযোগের জগতে তাদের প্রকৃত ভূমিকার অন্তর্দৃষ্টি মিলেছে।
হিউস্টন তার বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, ইমোজি নিছক বিনোদন নয়; এগুলির শিরায়-শিরায় রাজনীতি প্রবাহিত। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে অ্যাপল তাদের বাস্তবসম্মত ধূসর-কালো রিভলভার ইমোজিটিকে প্রতিস্থাপন করে একটি সবুজ ওয়াটার পিস্তল দিয়ে। পরবর্তীতে অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্টও একই পথ অনুসরণ করে। ফলে আজ যে “পিস্তল” ইমোজি আমরা দেখি, সেটি আসলে ওয়াটার গান বা সাই-ফাই রে-গান, যদিও তার মূল অর্থ ছিল হ্যান্ডগান বা রিভলভার। হিউস্টন ব্যঙ্গ করে প্রশ্ন তোলেন—এ পরিবর্তন কি সত্যিই বৈশ্বিক বন্দুক-সহিংসতা রোধে কোনো ভূমিকা রেখেছে?
তবে ইমোজির রাজনৈতিক রূপান্তর কেবল অস্ত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বছরজুড়ে সাধারণ মানুষ সফলভাবে লবি করেছে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের কাছে—যা গুগল, মাইক্রোসফ্ট, মেটা ও অ্যাপলের মতো কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত—বিভিন্ন ত্বকের রঙ ও সমলিঙ্গ দম্পতির ইমোজি যুক্ত করার জন্য। যেখানে ভ্রু তোলা মুখ, গাইড ডগ বা ডিমের মতো ইমোজি যুক্ত করা তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল, সেখানে “কপালে ভাঁজ তোলা পু ইমোজি”র মতো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এমনকি এই প্রসঙ্গে ইউনিকোডের এক গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী মাইকেল এভারসন রসিকতা করে প্রশ্ন তুলেছিলেন—এরপর কি তবে কান্নারত পু বা জিভ-বার করা পু ইমোজিও তৈরি হবে?
জনপ্রিয় ধারণার বিপরীতে, “ইমোজি” শব্দটির সঙ্গে আবেগের সরাসরি সম্পর্ক নেই। আসলে এটি জাপানি শব্দ “ছবি” (e) ও “লিখিত অক্ষর” (moji) মিলিয়ে গঠিত। গবেষকেরা দেখিয়েছেন, এই প্রতীকের ইতিহাস প্রথম আইফোনের চেয়েও প্রাচীন—এমনকি মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক পিডিএরও আগের। ১৯৮০-এর দশকে শার্প ও তোশিবার কিছু ইলেকট্রনিক টাইপরাইটার ও ওয়ার্ড প্রসেসরের অপারেটিং সিস্টেমেই একটি প্রাথমিক ইমোজি সেট পাওয়া যেত।
ইমোজির আগে ছিল ইমোটিকনের যুগ—নিয়মিত অক্ষর দিয়ে তৈরি ছোট ছোট মুখভঙ্গি, যেমন বিখ্যাত শ্রাগ চিহ্ন: ¯\(ツ)/¯। আরও পেছনে গেলে দেখা যায়, মানুষ বহু আগে থেকেই পিক্টোগ্রাফ ব্যবহার করত—মিশরীয় হায়ারোগ্লিফের মতো। মুভেবল টাইপের আগমনেও প্রকাশকরা প্রতীক ব্যবহারে আগ্রহী ছিলেন—যেমন নতুন অনুচ্ছেদের জন্য পিলক্রো ¶ বা দুঃখজনকভাবে আজ প্রায় হারিয়ে যাওয়া ম্যানিকুল ☞, যা মার্জিনে দিকনির্দেশক হাত দেখাত।
হিউস্টন যুক্তি দেন, মেকানিক্যাল টাইপরাইটারের যুগ ছিল মানব প্রকাশভঙ্গির ইতিহাসে এক অদ্ভুত শূন্যতা—এক ধরনের অভিব্যক্তির দারিদ্র্য। যেই মানুষ সেই সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেল, প্রতীকের খেলা বা সিম্বলিক প্লে ছিল অবশ্যম্ভাবী।
এই ধরনের যুক্তি প্রায়ই অনভিজ্ঞদের মনে ভুল ধারণা জাগায় যে ইমোজি হয়তো একটি “ভাষা”—যা আসলে নয়। হিউস্টন এ বিষয়ে ২০০৯ সালের “ইমোজি ডিক” প্রকল্পের উদাহরণ টানেন। ডেভেলপার ফ্রেড বেনেনসন তখন হাজারো স্বেচ্ছাসেবককে হারম্যান মেলভিলের মবি-ডিক ইমোজিতে অনুবাদ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু হিউস্টনের মতে, যদি ইমোজি সত্যিই একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষা হতো, তবে মূল পাঠ সম্পর্কে কিছু না জেনেও ইমোজি ডিককে যথাযথভাবে বোঝা সম্ভব হতো—যা বাস্তবে হয়নি।
ফলে হিউস্টন সিদ্ধান্তে আসেন, ইমোজি মূলত একটি “লিপি”—লেখার একধরনের ভিজ্যুয়াল পদ্ধতি। একটি ইমোজি সেটকে শব্দভাণ্ডারের সমতুল্য ধরা যায়, কিন্তু এর মাধ্যমে জটিল কোনো ধারণা সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় না। তাই ইমোজিকে ভাবা ভালো বিস্তৃত, অভিব্যক্তিমূলক বিরামচিহ্নের মতো—যা লেখা ভাষার আবেগঘনতা বাড়ায়, কিন্তু নিজে থেকে পূর্ণাঙ্গ ভাষা গঠন করে না।
এই ক্ষুদ্র হলুদ হাসির ফোঁটাগুলোর পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে? ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের মতে, আর কোনো নতুন পতাকা ইমোজি যোগ করার পরিকল্পনা নেই—যা ইমোজির সবচেয়ে কম ব্যবহৃত বিভাগ। বিস্ময়করভাবে, দ্বিতীয় সর্বনিম্ন জনপ্রিয় বিভাগ হলো স্তন্যপায়ী প্রাণী, যা স্টিভেন পুলকে রসিকতার সুরে ভবিষ্যতে আরও বিড়ালের মুখ যোগ করার পরামর্শ দিতে প্রলুব্ধ করেছে।
একসময় নিশ্চয়ই ফ্লপি ডিস্ক ইমোজি অবসরে যাবে—এই প্রতীক তো এমন এক স্টোরেজ মাধ্যমের ছবি, যা আজকের প্রজন্মের অধিকাংশ মানুষ কখনও দেখেইনি। হিউস্টন এ পর্যায়ে প্রশ্ন তোলেন—আমাদের কি নিজস্ব কাস্টম ইমোজি তৈরির সুযোগ থাকা উচিত? স্টিভেন পুল ব্যঙ্গ করে উত্তর দেন—যেমন তিনি প্রতিটি বাক্যের শেষে ফুলস্টপ নতুন করে বানাতে চান না, তেমনই অধিকাংশ মানুষও এমন স্বাধীনতায় বিরক্ত হবে।
কেইথ হিউস্টনের ফেস উইথ টিয়ার্স অফ জয় ইমোজির প্রায়শই ভুল বোঝা জগৎকে সুস্পষ্ট করে তোলে। তিনি শুধু এদের উৎপত্তি ও বিবর্তনের ইতিহাসই নয়, বরং তাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব এবং যোগাযোগের প্রকৃত ক্ষমতাও উদঘাটন করেছেন। হিউস্টনের ব্যাখ্যায়, এই “সর্বব্যাপী প্রতীকগুলি” আমাদের ডিজিটাল কথোপকথনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে এবং একধরনের “প্রসারিত অভিব্যক্তির প্যালেট” হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের ভাষাকে আবেগ ও রসিকতার নতুন রূপ দেয়।
বইটি কেবল প্রযুক্তি-ইতিহাসের অনুরাগীদের জন্য নয়, বরং প্রতিদিনের ডিজিটাল যোগাযোগে যুক্ত যে-কোনো পাঠকের জন্যই এক তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি। এটি আমাদের বাধ্য করে ভাবতে—স্ক্রিনে ভেসে ওঠা এই ক্ষুদ্র চিহ্নগুলির মধ্যে লুকিয়ে আছে ঠিক কতটা অর্থ, এবং কীভাবে তারা নীরবে আমাদের প্রকাশভঙ্গি ও সংস্কৃতিকে রূপান্তরিত করছে।
Houston, Keith. (2025, July 01). Face with Tears of Joy: A Natural History of Emoji (288 pp.). W. W. Norton & Company.
এই প্রবন্ধটির ইমোজি সংস্করণের PDF Link.