জেরাল্ড মুরনেনের সাক্ষাৎকার
দ্য প্যারিস রিভিউ-এ প্রকাশিত দ্য আর্ট অফ ফিকশনে জেরাল্ড মুরনেনের সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন লুইস ক্লি। বাংলা ভাষান্তর: রিটন খান।
জেরাল্ড মুরনেন, দ্য আর্ট অফ ফিকশন
দ্য প্যারিস রিভিউ
জেরাল্ড মুরনেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ: লুইস ক্লি
ভাষান্তর: রিটন খান
জেরাল্ড মুরনেন বাস করেন গোরোকে, একটি ছোট শহর যেখানে মাত্র তিনশ জন বাসিন্দা। এটি অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্ট উইমেরা সমতলভূমিতে অবস্থিত, মেলবোর্ন থেকে গাড়িতে পাঁচ ঘণ্টার পথ। এটি ক্লাসিক আউটব্যাক নয়, উইমেরা অঞ্চলের গ্রামীণ প্রকৃতি নির্জন । এখানকার বনভূমি গম চাষের জন্য উপযোগী, আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন গাম গাছগুলো যেন সমতল ভূমির বিশালতা আর শূন্যতাকে আরো স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
এই স্থান মুরনেনের কল্পগল্পের সাথে বেশ সাযুজ্যপূর্ণ। তার গল্পের বর্ণনাকারীরা প্রায়শই “ছবির মতো এক প্রান্তর, যেখানে সমতল তৃণভূমি আর ছড়িয়ে থাকা ছবির মতো গাছ” নিয়ে মগ্ন থাকে। এই পরিবেশ তার লেখার নৈসর্গিক, বিমূর্ত প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি, যা তার সাহিত্যকর্মে গভীর আবেদন যোগ করে।
এক সময় মনে হয়েছিল জেরাল্ড মুরনেনের সাহিত্যিক জীবন দেরিতে শুরু হয়ে আগেভাগেই শেষ হয়ে গেছে। তার প্রথম উপন্যাস Tamarisk Row প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে, যখন তার বয়স ছিল পঁইত্রিশ। দীর্ঘ, জটিল, এবং কখনো কখনো অতিমাত্রায় অলঙ্কৃত বাক্যের মাধ্যমে গ্রামীণ স্কুলছাত্রের কল্পিত জগৎ তুলে ধরে এই উপন্যাস কিছুটা প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবু, সেই সময়ে মুরনেন নিজেকে প্রায় ব্যর্থ মনে করতেন—সমালোচকদের দ্বারা ভুল বোঝা ও প্রধান প্রকাশকদের নজরে উপেক্ষিত। তার আজকের সবচেয়ে প্রশংসিত উপন্যাস The Plains (১৯৮২) প্রথমে একটি ছোট সায়েন্স-ফিকশন প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়। এতে এক তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতার অস্ট্রেলিয়ার অন্তর্দেশীয় সৌন্দর্যে “দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে থাকা অর্থ” খোঁজার সংগ্রাম এবং শেষে নিজের চোখেই ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেওয়ার চমকপ্রদ দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
Inland (১৯৮৮) এর পরে, মুরনেন দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য কোনো উপন্যাস প্রকাশ করেননি, যদিও কিছু ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। এই “বিরতি” নিয়ে সমালোচকরা বহু কথা বলেছেন—যেমন তার ছোটগল্প সংকলন Emerald Blue (১৯৯৫)-এর শেষ বাক্যটি অনেকের কাছে তার লেখালেখির ইতি ঘোষণার মতো মনে হয়েছিল: “লেখালেখি এখানে শেষ।” তবে, তার বর্তমান খ্যাতি মূলত তার ফিরে আসার কারণে, যা শুরু হয় Barley Patch (২০০৯) দিয়ে। এরপর দ্রুত পরপর প্রকাশিত হয় কয়েকটি বই: A History of Books (২০১২), A Million Windows (২০১৪), এবং Border Districts (২০১৭)।
Barley Patch এবং তার পরবর্তী রচনাগুলো চমৎকার বৈপরীত্যে ভরা—একটি অনধিকৃত বইয়ের জন্য শোকগাথা, যা একই সঙ্গে জটিল প্যাটার্ন ও চিত্রে মুগ্ধ করে এবং এমন এক ব্যক্তির কণ্ঠে রচিত, যিনি দাবি করেন যে কথাসাহিত্যই বাস্তবতার সর্বোত্তম রূপ। গত পনের বছরে, জে. এম. কুটজি এবং বেন লার্নারের মতো লেখকরা মুরনেনের লেখালেখির প্রশংসা করেছেন, এবং তিনি নোবেল পুরস্কারের একজন নিয়মিত সম্ভাব্য একজন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তার প্রায় বিলুপ্তপ্রায় প্রাথমিক লেখাগুলো অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রকাশকরা নতুন করে প্রকাশ করছে, যা দীর্ঘদিন ধরে অপ্রাপ্য ছিল।
জেরাল্ড মুরনেন ১৯৩৯ সালে মেলবোর্নের শ্রমজীবী উপশহর কোবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব প্রভাবিত হয়েছিল তার বাবা রেজিনাল্ডের ভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যে, যিনি ছিলেন একজন স্বভাবগত জুয়াড়ি এবং ঘোড়দৌড়ে বাজি ধরতেন। ১৯৬৪ সালে মুরনেন তার প্রয়াত স্ত্রী ক্যাথরিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ক্যাথরিন ছিলেন একজন মনোবিজ্ঞানী। তাদের তিন পুত্র—জাইলস, গ্যাভিন, এবং মার্টিন—ছিল এবং তারা মেলবোর্নের ম্যাকলিওড এলাকায় জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন।
তাদের বড় ছেলে জাইলস গোরোকে শহরে মুরনেনের আগেই বসবাস শুরু করেন। মুরনেন বর্তমানে জাইলসের বাড়ির পেছনে একটি শেডে বসবাস করেন। এটি একটি আয়তাকার ঘর, যা মাউন্ট গ্যাম্বিয়ার লাইমস্টোনের বিশাল স্ল্যাব দিয়ে তৈরি। কংকর বিছানো একটি গলিপথ থেকে সেখানে পৌঁছানো যায়, যা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঢেউটিনের পাতায় ঢেকে থাকে।
মুরনেনের ঘরের ভেতরে প্রায় সব স্থান দখল করে রেখেছে ইস্পাতের ফাইলিং ক্যাবিনেট, যেখানে তিনি তার বিশাল আর্কাইভ সংরক্ষণ করেন। ক্যাবিনেট এতটাই বেশি যে সেখানে একটি বিছানা রাখার জায়গাও নেই। তিনি একটি ক্যাম্পিং স্ট্রেচারে ঘুমান, যা তিনি প্রতিদিন সকালে গুটিয়ে ফেলেন। তার আর্কাইভ তিনটি বিভাগে বিভক্ত:
১. Chronological Archive—ব্যক্তিগত স্মৃতি, যার মধ্যে একটি ক্যাবিনেট রয়েছে যা তিনি রহস্যময়ভাবে titkos dolgok (হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় “গোপন বিষয়”) বলে উল্লেখ করেন।
২. Literary Archive—যেখানে তার পাণ্ডুলিপি, অপ্রকাশিত কাজ, এবং বই সম্পর্কিত কাগজপত্র সংরক্ষিত।
৩. Antipodean Archive—১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিভাগে মানচিত্র, চার্ট এবং রেকর্ড রয়েছে, যেখানে তিনি তার লেখা অনুযায়ী, “নতুন ইডেন এবং নতুন আরকাডি নামের দুটি কাল্পনিক দেশের ঘোড়দৌড়ের সংগঠন, প্রশাসন, এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম” লিপিবদ্ধ করেছেন।
তার ড্রয়ারগুলোতে রয়েছে পঞ্চাশ ঘণ্টার বেশি ডিক্টেট করা টেপ, ভবিষ্যতের কোনো গবেষকের জন্য, যারা তার আর্কাইভের ব্যক্তিগত কোড বুঝতে সাহায্য চাইতে পারে। সঙ্গে রয়েছে একটি অতিরিক্ত টেপ প্লেয়ার, যেটি যান্ত্রিকভাবে অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথা ভেবে রাখা। এমনকি তার মোবাইল ফোনে পাঠানো টেক্সট বার্তাগুলোও তিনি পরম নিষ্ঠায় ট্রান্সক্রাইব করে সংরক্ষণ করেন।
তার এই অস্বাভাবিকভাবে সতর্ক রেকর্ড সংরক্ষণের অভ্যাস অন্যদের উপর প্রভাব ফেলে, যা তিনি উপভোগ করেন। গ্রন্থাগারিকরা তার আর্কাইভের সম্ভাব্য নিলামমূল্য নিয়ে প্রশংসা করেন, কিন্তু তিনিমনে করেন, কিছু মানুষ তাদের নিজস্ব চিহ্ন মুছে ফেলতে চান। এখন তিনি এই আর্কাইভ তালাবদ্ধ রাখেন। মুরনেন একবার আমাকে বলেছিলেন, “আমার বইয়ের লেখক হিসেবে নয়, বরং আর্কাইভের রচয়িতা হিসেবে আমি পঞ্চাশ বছর পর আরও বেশি পরিচিত হব।”
জুলাই মাসে মুরনেনের সঙ্গে কাটানো তিন দিনের জন্য তিনি বিস্তারিত কর্মসূচি তৈরি করেছিলেন। এটি শুরু হয় স্থানীয় গলফ ক্লাবে থেকে, যেখানে তিনি সাংবাদিকদের এবং “তীর্থযাত্রীদের” (তার ভাষায়, যারা গোরোকে এসে তার সঙ্গে দেখা করেন) নিয়ে যান। পরের দিন, তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন লিটল ডেজার্টের দক্ষিণের ঝোপঝাড়ে, যাকে তিনি বললেন “সত্যিকারের বর্ডার ডিস্ট্রিক্ট।” ড্রাইভের সময়, কথোপকথনে ফাঁকে ফাঁকে, তিনি আমাদের মাঝে রাখা ভয়েস রেকর্ডারের দিকে ইঙ্গিত করেন তখন আমি ও আমার সহকারী ছয়-সাত মিনিট হলো গাড়ি চালাচ্ছি।
আমাদের বেশিরভাগ সময় কাটে তার ঘরে, যেখানে তিনি একজন ধৈর্যশীল আর্কাইভিস্টের ভূমিকা পালন করেন, যেন তার সংগ্রহের একচেটিয়া ভ্রমণসঙ্গী আমিই। তিনি তার জীবনী, মতামত বা লেখালেখির প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন এড়িয়ে যেতেন। তার বই সম্পর্কে প্রশ্ন করলে, তিনি সংশ্লিষ্ট ড্রয়ার খুঁজে বের করতেন, যেখানে একসময় নিজের লেখা একটি হাতে লেখা নোট রাখা আছে, এবং এটি জোরে পড়ে শোনাতেন। প্রথম দিনের শেষে, আমরা একটি স্টিলের ফাইলিং ক্যাবিনেটের বেশি এগোতে পারিনি।
তাৎক্ষণিক কফি বানাতে বা কিছু গসিপ শেয়ার করতে মুরনেন মাঝে মাঝে বিরতি নিতেন। দ্বিতীয় দিনের দুপুরে, তিনি জোর করে আমাকে গোরোকে মেন’স শেডে নিয়ে গেলেন, যেখানে স্থানীয় অবসরপ্রাপ্তরা বিভিন্ন হস্তশিল্পে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। মেন’স শেড সেদিন বন্ধ ছিল, কিন্তু মুরনেনের কাছে চাবি ছিল। আমি বোর্ডরুমে একা বসে স্যান্ডউইচ খেয়েছিলাম, যেন ক্যাফেতে একা অপেক্ষায় থাকা একটি শিশু।