দ্বিতীয় জোকার মুভিটি দেখে মনটা তেঁতো হয়ে গেল।
যদি হার্লি কুইনের মতো শক্তিশালী একটি চরিত্রকেও এত সরলীকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়, তবে আমরা বুঝতে পারি যে আরও অনেক নারী চরিত্রই চলচ্চিত্রে কতটা অবহেলার স্বীকার।
Joaquin Phoenix অভিনীত প্রথম জোকার সিনেমাটি দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে দ্বিতীয় জোকার মুভিটি দেখার তর সইছিলা না। তাই মুভিটি রিলিজের সাথে সাথে দেখতে সিনেমা হলে ছুটেছিলাম। কিন্তু...
আমাদের কমিক বইয়ের চরিত্রগুলোর মাঝে যে গভীর ভালোবাসা লুকানো থাকে, তা অনেক সময় ভুলভাবে সিনেমার পর্দায় উপস্থাপন করা হয়। টড ফিলিপসের “Joker: Folie à Deux” তেমনই একটি উদাহরণ যেখানে হার্লি কুইনকে লেডি গাগার চরিত্রায়নের মধ্য দিয়ে একজন নারীর অবমাননাকর চিত্রায়ন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
হার্লি কুইন, যাকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী, জটিল চরিত্র হিসেবে চিনেছি, এখানে পুরোপুরি ভিন্ন আকারে উপস্থাপিত হয়েছে। তার সাইকিয়াট্রিস্ট থেকে ক্রমশ জোকারের প্রভাবের অধীনে পাগলামির দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে গাঢ় মানসিক অবস্থা, তা এখানে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা হয়েছে। বরং, আমরা দেখি এক হতাশাগ্রস্থ লি কুইনজেল, যার একমাত্র লক্ষ্য যেন আর্থার ফ্লেকের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা। এই ভালোবাসা নিয়ে সে একটি দুঃস্বপ্নময় ফ্যান্টাসিতে মেতে ওঠে। লি আর্থারের প্রতি মিথ্যার জাল বুনে, আর এই মিথ্যা তাকে প্রতারিত করে ভিন্ন এক বাস্তবতায় নিয়ে যায়।
এই চরিত্রের মধ্যে যে গভীরতা থাকা উচিত ছিল, সেটি এখানে পাওয়া যায় না। লেডি গাগার হার্লি একসময়ের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, উন্মাদনার প্রতীক হার্লির ছায়ামাত্র। তার বিখ্যাত উচ্চস্বরে কথা বলা, কমিকের মধ্যে থাকা সেই বন্যতা—সব কিছুকেই ফিলিপস সরিয়ে ফেলেছেন তার “গথাম” শহরের নতুন প্রেক্ষাপটের জন্য। এ যেন আরেকটি পুরুষকেন্দ্রিক গল্প যেখানে নারী শুধুমাত্র এক পুরুষের যন্ত্রণার উৎস, একটি “মাস্টার ম্যানিপুলেটর”। এই ধারণা এতটাই সরল ও ক্ষতিকর যে, আমাদের জানা হার্লির গভীরতা এবং তাঁর দ্বন্দ্বগুলো সম্পূর্ণভাবে ছাপিয়ে যায়।
একটা ঘটনা আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, যখন আমি প্রথম হার্লি কুইনের কমিকস পড়ি। হার্লি তার পাগলামির মধ্যেও একটি স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রাখে, আর তার কাহিনী শুধুমাত্র জোকারের প্রভাবে গড়ে ওঠেনি। হার্লি কুইন যে শুধু এক নিষ্ঠুর মনোবিজ্ঞানী থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত একজন হয়ে ওঠে, তা নয়; বরং তার চরিত্রের মধ্যে আছে নিরন্তর এক মুক্তি খোঁজার প্রচেষ্টা। কিন্তু এই ছবিতে হার্লিকে শুধুমাত্র এক ব্যর্থ ভালোবাসার শিকার হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেখানে তার পাগলামি, স্বাধীনতা এবং যৌনতা মুছে ফেলা হয়েছে।
“Joker: Folie à Deux” এর শেষ দিকে যখন লি আর্থারের কাছ থেকে সে দূরে সরে যায়, তখন আমাদের স্পষ্টভাবে দেখানো হয় যে সে শুধু আর্থারের শক্তি এবং হিংস্রতায় মুগ্ধ ছিল, আর সেই প্রকৃত আর্থার সম্পর্কে তার কিছুই জানা ছিল না। ফিলিপস এই নির্লজ্জ পুরুষালী ফ্যান্টাসিতে ডুবে থাকা গল্পকে আরও জটিল করে তুলেছেন, যেখানে নারীরা শুধুই মিথ্যার ফাঁদ পেতে পুরুষদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
ফিলিপসের এই ব্যাখ্যায়, হার্লি কুইন চরিত্রটি হারিয়ে যায়। সে আর আগের মতো শক্তিশালী, স্বাধীন কিংবা বিতর্কিত নয়। বরং, সে এক ধরণের পুরুষ-নির্ভর চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা নারীর স্বাধীনতার উপর এক গভীর আঘাত।
আমার মনে হয়, হার্লি কুইনের মতো একটি বহুমাত্রিক চরিত্রের এই ধরণের উপস্থাপনা শুধু তাকে নয়, পুরো নারীকুলের প্রতিনিধিত্বকেও ক্ষুণ্ণ করে। যদি হার্লি কুইনের মতো শক্তিশালী একটি চরিত্রকেও এত সরলীকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়, তবে আমরা বুঝতে পারি যে আরও অনেক নারী চরিত্রই চলচ্চিত্রে কতটা অবহেলার স্বীকার।
“Joker: Folie à Deux” আমাদের দেখায় যে, চরিত্রের গভীরতা হারিয়ে গেলে কীভাবে একটি কাহিনী শুধুমাত্র একতরফা হয়ে যায়, যেখানে নারীরা কেবল পুরুষদের ট্র্যাজেডির একটি অংশ হিসেবে থেকে যায়। হার্লির এমন অপমানজনক চিত্রায়ন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নারীদের স্বাধীনতা এবং জটিলতাকে সম্মান করে গল্প বলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।