নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো: আফ্রিকান সাহিত্যের একজন মহীরূহ
যিনি কেবল নিজের কলমে নয়, নিজের জীবনের মধ্য দিয়েও দেখিয়েছেন স্বাধীনতা মানে কেবল রাষ্ট্রিক মুক্তি নয়; এটি ভাষার মুক্তি, সংস্কৃতির মুক্তি, এবং চেতনার পুনর্জাগরণ।
নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, উপনিবেশ-পরবর্তী আফ্রিকান সাহিত্যবীক্ষার এক অনন্য কণ্ঠস্বর, তাঁর জীবদ্দশায় পরিণত হয়েছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তিতে। কেনিয়ার এই লেখককে আফ্রিকান সাহিত্যের একজন দিকপাল হিসেবে বিবেচনা করা হতো, যাঁর জীবন জড়িয়ে ছিল ইতিহাসের বহু নাটকীয় পর্বের সঙ্গে। তিনি ছিলেন চিনুয়া আচেবে ও ওলে সোয়িঙ্কার মতো যুগসামান্তর লেখকদের সমসাময়িক, যাঁরা ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে আফ্রিকার সাহিত্য-জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আচেবে যেভাবে উপনিবেশিক শাসনের ফলে সৃষ্ট আত্মবিচ্ছিন্নতার বেদনাকে ধারণ করেছিলেন, আর সোয়িঙ্কা যেভাবে আফ্রিকান ঐতিহ্য ও পাশ্চাত্য মুক্তির ধারণার সংঘাত বিশ্লেষণ করেছিলেন, নগুগি তেমনি দাঁড়িয়েছিলেন এক প্রতিবাদী, প্রত্যক্ষ ও নির্ভীক কণ্ঠস্বর হয়ে। তাঁর উপন্যাসগুলো ছিল যেন একটি বিশাল ভাষিক অস্ত্র, যা দিয়ে তিনি আঘাত করেছিলেন প্রথমে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকে, পরে স্বাধীন কেনিয়ার স্বৈরতান্ত্রিক ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকের বিরুদ্ধে। ৮৭ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি রয়ে গিয়েছিলেন আপসহীন, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এক লেখক, যার সাহিত্যিক জীবন ছিল দীর্ঘ এবং সংগ্রামে পূর্ণ।
নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো-র জীবন ২০শ শতকের বিশাল একটি পরিসর জুড়ে বিস্তৃত ছিল। তিনি জন্মেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগমুহূর্তে, সেই সময়ে যখন কেনিয়া ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি উপনিবেশ। তাঁর শৈশব কেটেছিল স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ছায়ায়, যা তাঁর রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক চেতনার বীজ বপন করেছিল।
উগান্ডার মেকেরেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন—একটি সময়, যখন গোটা আফ্রিকাজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সাহিত্যিক নবজাগরণ একসঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছিল। যখন উগান্ডা ১৯৬২ সালে এবং কেনিয়া ১৯৬৩ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন নগুগি তরুণ । কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোয় তিনি প্রত্যক্ষ করেন কীভাবে সেই বহুপ্রতীক্ষিত স্বাধীনতার স্বপ্ন ক্রমেই ধুলিসাৎ হয়—একটি কর্পট রাষ্ট্র ও বিশ্বাসঘাতক নেতৃত্বের কারণে।
এই বাস্তবতার প্রতিক্রিয়ায় নগুগি কলম ধরেন, আর তাঁর সাহসী লেখালেখির ফলস্বরূপ কেনিয়ার সরকার তাঁকে কারাগারে পাঠায়। মুক্তি পাওয়ার পরও তিনি থামেননি—নিজের রাজনৈতিক আদর্শ এবং সাহিত্যকর্মকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে কেনিয়াতে, পরে নির্বাসনে লন্ডনে, এবং অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে তিনি গত তিন দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য পড়িয়েছেন।
Keep reading with a 7-day free trial
Subscribe to Riton Khan to keep reading this post and get 7 days of free access to the full post archives.