মোহনলালকে রবীন্দ্রনাথের সেই চিঠি
রবীন্দ্রনাথের সেই চিঠি, তারিখ ৯ জুলাই, ১৯৩২ – শান্তিনিকেতন থেকে মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে। চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন...
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় এরিখ মারিয়া রেমার্কের 'অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট' – যুদ্ধের রক্তাক্ত থিয়েটারে দাঁড়িয়ে যেন এক নীরব আর্তনাদ। মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় এই বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন কিশোরদের জন্য। কিন্তু কিশোরদের জন্য বললেই কি সেটা সহজ করে বলা? রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং এই অনুবাদের প্রশংসা করেছিলেন – এবং কেন করেছিলেন, সেটার কারণটা বোঝা গেল, যখন প্রতিটি শব্দের ভেতর দিয়ে মোহনলাল নিজের চেতনাকে বইয়ের চেতনার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথের সেই চিঠি, তারিখ ৯ জুলাই, ১৯৩২ – শান্তিনিকেতন থেকে মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে। চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন,
আমি এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে, এরিক রেমার্কের 'অল কোয়ায়েট অন দি ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট' বইটি বাংলায় অনুবাদ করার জন্য মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। মোহনলাল একজন প্রতিভাবান তরুণ লেখক, যিনি বাংলা ভাষার উপর চমৎকার দখল রাখেন। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মোহনলালের অনুবাদ যেন জার্মান ট্রেঞ্চের কাদামাটি আর বারুদের গন্ধ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে ঢুকে পড়েছে। এখানে যুদ্ধ শুধু খুনোখুনি নয় – মানুষের আত্মার কাঁদুনি। যুদ্ধের মাঠে যে নৈঃশব্দ্য, যা বোমার শব্দের থেকেও বুকে বাজে, সেটাই এই অনুবাদের সত্যি অর্জন। বয়ঃসন্ধির কিশোরেরা যুদ্ধের নাম শুনে হয়তো রোমাঞ্চিত হয়, কিন্তু এই বই পড়ে তারা রোমাঞ্চের সঙ্গে সঙ্গে বুঝবে, রক্তপাত মানে বীরত্ব নয়, বরং হারানো যৌবনের নীরব প্রলাপ। মোহনলাল যেন এক হাতে কিশোরদের যুদ্ধ দেখাচ্ছেন, আর অন্য হাতে তাদের চোখে হাত চাপা দিয়ে বলছেন, “তোমরা কি দেখতে পাচ্ছো, যুদ্ধ আসলে কী?”
এবং সত্যিই, এরকম এক অনুবাদের জন্য রবীন্দ্রনাথের থেকে প্রশংসাপত্র পাওয়া – এটা তো আর ফেলে দেওয়ার মতো কথা নয়। তবে কী, অনুবাদ শুধু ভাষার মধ্য দিয়ে নয়, চেতনার মধ্য দিয়েও ঘটে। মোহনলাল যেন একটা যুদ্ধ-চেতনার নতুন পাতা খুলে দিয়েছিলেন, যেখানে কিশোরদের পাঠ্যবইয়ের যুদ্ধ আর বাস্তবের যুদ্ধ – দুটোর মধ্যে একটা অনন্ত ফারাক। আর সেই ফারাকটা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন মোহনলাল। যুদ্ধবিরোধী রচনার অনুবাদ, যেখানে যুদ্ধ শব্দটাই যেন আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে। কারণ, রেমার্কের গল্পটা তো শুধু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নয় – প্রতিটি যুদ্ধেরই গল্প। আর মোহনলাল সেই গল্পটা আমাদের বাংলায় এমনই চড়া কণ্ঠে শোনালেন যে, রক্ত আর মাটির গন্ধ একসঙ্গে এসে নাকে লাগে। এটাই তো আসল অনুবাদের সার্থকতা।
রবীন্দ্রনাথের প্রশংসাপত্র ইংরেজিতেঃ
UTTARAYAN SANTINIKETAN, BENGAL July 9, 1932 This is to certify that I consider Mr.Mohonlal Ganguly in every way competent to translate Eric Remarque's "All Quiet on the Western Front" into the Bengali language. Mr. Ganguly is a gifted young, writer possessing a fine command over the Bengali language. Rabindranath Tagore
মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় বইটির ডাউনলোড লিঙ্ক।