শালীনতার শেষ সীমা: ট্রাম্প ২.০ ও ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের টানাপোড়েন
সবকিছু যেন আচমকাই থেমে গেছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমন যেন কূটনীতির কাচের বাড়িতে ছোঁড়া এক হঠাৎ ঢিল—শব্দ ততটা নয়, আঘাত গভীর।
রিটন খান
আমি সেই ক্লিনটন প্রশাসন থেকেই খেয়াল করছি যে, আমেরিকাকে অনেকেই অস্থির আর স্বার্থপর বললেও, ভারতের সঙ্গে তার কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটি ছিল একদম উল্টো—ধীর, ধারাবাহিক ও বহু প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টার ফল। ক্লিনটন এই পথ খুলেছিলেন, বুশ-ওবামা তা মজবুত করেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্ক একরকম অলিখিত চুক্তিতে পৌঁছেছিল—বিশ্বাস, প্রযুক্তি, সামরিক কৌশল সব মিলিয়ে।
এই নির্মাণকেই হঠাৎ চ্যালেঞ্জ করে বসেন ট্রাম্প। তিনি ভারতের ওপর উচ্চ ট্যারিফ চাপান, পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান, এমনকি নিজের প্রশাসনের আগের নীতিও উল্টে দেন। শুধু ধাক্কা নয়, এটাকে বলা যায় আত্মঘাতী—বিশ্বাস ভাঙা। ট্রাম্পের এমন আচরণ যদি ধারাবাহিকতায় রূপ নেয়, তাহলে এটিই হতে পারে তাঁর সবচেয়ে বড় কৌশলগত ভুল। এবং ভারত—যে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল—সেও তখন এই সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাববে।
কোল্ড ওয়ারের ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে যখন পৃথিবী নতুন এক ভারসাম্য খুঁজছিল, তখন আমেরিকা চুপিচুপি সুস্পষ্ট কৌশলে—ভারতের দিকে হাত বাড়াল। এটি আমার চোখে পড়ে যখন ২০০০ সালে ক্লিনটন ভারত সফরে যান, যা ছিল একপ্রকার কূটনৈতিক পুনর্মিলন—দুই পুরনো, দূরবর্তী আত্মীয় যেন হঠাৎ একটি নতুন ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় হাত মেলালো।
তবে আসল মোড় ঘুরল জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে। তাঁর প্রশাসন দ্রুত বুঝে ফেলেছিল—চীন আর শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, বরং একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার নকশা আঁকছে। বুশ প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি এখানে এক নতুন কৌশলগত প্রজ্ঞা নিয়ে হাজির হয়েছিল: যদি চীন এশিয়ায় আধিপত্য কায়েম করতে চায়, তবে তাকে সামলাতে আমেরিকার প্রয়োজন ভারতের সঙ্গে গভীর জোট। কারণ ভারত কেবল অর্থনৈতিকভাবে উদীয়মান নয়—এটি এক মহাদেশীয় গণতন্ত্র, এক সভ্যতাগত শক্তি, যার পাশে থাকলে আমেরিকার কৌশলগত পাল্লা ভারী হয়। ওয়াশিংটন আর নয়াদিল্লির এই ঘনিষ্ঠতা তখন নিছক কূটনৈতিক সৌজন্যের বাইরে গিয়ে হয়ে উঠল এক নতুন ভূরাজনৈতিক চিত্রাঙ্কনের সূচনা।
এই ঘনিষ্ঠতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচি। আমেরিকা, তার সেই চিরাচরিত নৈতিক—ননপ্রোলিফারেশন নামক নীতির ছাতা ধরে—ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের উপরই নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল। বার্তাটা ছিল স্পষ্ট অর্থাৎ, বৈশ্বিক মঞ্চে প্রবেশের দরজা তখনও ভারতের জন্য বন্ধই থেকে গিয়েছিল। কিন্তু এখানেই বুশ প্রশাসন দেখাল এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক খেলা—রিয়ালপলিটিকের ছাঁচে ঢালা কূটনীতি দিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিল, ভারত আর ‘ব্যতিক্রম’ নয়, বরং এক স্বীকৃত বিশ্বশক্তি। যেভাবে তারা ফ্রান্স, ব্রিটেন বা চীনের পারমাণবিক অবস্থানকে বাস্তব ধরে মেনে নিয়েছিল, তেমনভাবেই ভারতের অস্তিত্বকেও সম্মান জানাবে। এর ফলাফলই ছিল সেই যুগান্তকারী পরমাণু চুক্তি—যা শুধু ভারতের দীর্ঘদিনের ‘পারিয়া’ তকমা মুছে দিল তাই নয়, বরং আমেরিকার কাছেও এক নতুন ভূরাজনৈতিক দরজা খুলে দিল। এ যেন একসঙ্গে মর্যাদা, স্বার্থ আর বাস্তবতার হাত মেলানো।
এই কূটনৈতিক জট ছাড়াতে ভারতের পক্ষ থেকে যে নিঃশব্দ কিন্তু দৃঢ় নেতৃত্বটি সামনে আসে, তিনি ছিলেন মনমোহন সিং—একজন এমন প্রধানমন্ত্রী, যিনি রাজনীতির মঞ্চে ছিলেন যেন এক ধ্যানী অর্থনীতিবিদ, কম কথার মানুষ কিন্তু গভীর চিন্তার ধারক। তাঁর নেতৃত্বেই ভারত পারমাণবিক চুক্তির গোলকধাঁধা পেরিয়ে এক নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করে। সেই চুক্তি হয়ে দাঁড়ায় ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের এক সন্ধিক্ষণ—যেখানে শাস্তি আর সন্দেহের অতীতকে সরিয়ে জায়গা করে নেয় স্বীকৃতি, সহযোগিতা আর পারস্পরিক স্বার্থের বাস্তবতা।
পরমাণু চুক্তির পর যেন দুই দেশের সম্পর্ক নতুন গতিতে ছুটতে শুরু করল—ইঞ্জিনে পড়ল পেট্রোল, আর ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি একে অপরের কক্ষপথে আরও দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হলো। কূটনীতির বাইরে এই ঘনিষ্ঠতা ছড়িয়ে পড়ল অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং কল্পনার স্তরেও।
ওবামা প্রশাসন ততদিনে বুঝে গিয়েছিল—যদি আমেরিকার প্রভাব এশিয়ায় বাস্তবায়িত করতে হয়, তবে ভারতের সঙ্গ অপরিহার্য। কারণ এশিয়া তখন ধরা হচ্ছিল ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে, আর সেই কল্পনায় ভারত ছিল এক অবিচ্ছেদ্য কাণ্ডারি—নতুন কৌশলের ঘূর্ণিপাকে এক নির্ভরযোগ্য শরিক।
তারপর আসে ট্রাম্পের-যুগ—আর তার প্রথম মেয়াদেই যেন কৌশলগত শরীরে ঢুকে যায় স্টেরয়েডের ইনজেকশন। ট্রাম্প প্রশাসন চার পরাশক্তিকে—যা এতদিন ছিল শুধুই কূটনৈতিক খাতার এক কোণে পড়ে থাকা নাম—টেনে তোলে সক্রিয় প্রতিরক্ষা জোটের অগ্রভাগে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান আর ভারত মিলে চীনের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয় এক অস্বস্তিকর স্পষ্ট বার্তা।
আর ট্রাম্প? তিনি তো রাজনীতিকে বানিয়েছিলেন ব্যক্তিগত থিয়েটার—এক রিয়েলিটি শো যেখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্কও হয়ে যায় মঞ্চসজ্জা। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্যতা, ‘Howdy Modi’ আর ‘Namaste Trump’-এর মতো ইভেন্টগুলো ছিল ঠিক সেই নাটকের অংশ—যেখানে দুই নেতা একে অপরের মুখোমুখি নয়, বরং পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, বিশ্বকে দেখাচ্ছেন এক ধরনের গ্লোবাল রোডশো। বাস্তব আর রাজনৈতিক থিয়েটারের সীমানা তখন কেবল ঝাপসা নয়—প্রায় মুছে গিয়েছিল।
তারপর এলেন জো বাইডেন—যিনি স্টাইলের দিক থেকে ট্রাম্পের ঠিক বিপরীত, কিন্তু কৌশলগত ধারায় যেন তাঁরই উত্তরসূরি। বাইডেন কোনো নাটক না করেই ট্রাম্প-যুগের রেখে যাওয়া ঢেউয়ে নতুন পাল তোলেন, এবং তা বুদ্ধিমত্তায় আরও গভীর সমুদ্রে ভাসিয়ে দেন—প্রতিরক্ষা আর অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক যৌথ অভিযানে।
আজ ভারত-আমেরিকা একসাথে যুদ্ধবিমান থেকে সেমিকন্ডাক্টর—প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পে এক নতুন যুগের নির্মাতা। এবছরের শুরুর দিকে ভারত চীনকে পেছনে ফেলে আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন রপ্তানি করল। এটা শুধু বাণিজ্যের কথা নয়—এ এক প্রতীকী টেকটনিক শিফট। বিশ্ব যেন আস্তে আস্তে মেনে নিচ্ছে—ভারত এখন কেবল বাজার নয়, চীনের সম্ভাব্য বিকল্পও।
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে—ভারত মোটেই সহজ কোনও মিত্র নয়। যার কাঁধে এখনো রয়ে গেছে ঔপনিবেশিক অতীতের অদৃশ্য চুলকানি। দুই শতাব্দী ব্রিটিশদের অধীনে থেকে যারা পশ্চিমের প্রতি জন্ম নিয়েছিল তীব্র সংশয় নিয়ে, স্বাধীনতার পর সেই জাতিই গিয়ে দাঁড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ছায়ায়। আর আমেরিকা? সে তখন পাকিস্তানের পকেটে ডলার আর যুদ্ধবিমানের ঠোঙা ঢুকিয়ে ব্যস্ত। ভারতের দিকে ছিল কেবল ঠান্ডা অবিশ্বাস।
তার উপর, ভারত নিজেই এক ধরণের রাজনৈতিক সার্কাস—অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ভার এতটাই বেশি যে, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত নিতে গেলে প্রতিটা কূটনৈতিক চাল দেখতে হয় মাইক্রোস্কোপে। এমন দেশের সঙ্গে পার্টনারশিপ মানে যেন এক হাত দড়িতে আরেক হাতে ক্যালকুলেটর। তবুও, এই ঐতিহাসিক জট, রাজনৈতিক জটিলতা আর নীতিগত দ্বিধার মধ্যেও, আমেরিকা ধীরে ধীরে ভারতকে আপন করে তুলেছে। এখন দুই দেশের পদক্ষেপ এমন ছন্দে মেলে, যেন কেউ মুখে না বলেও বোঝে—“আমরা একসাথে এগোবো” একধরনের নীরব চুক্তি, যেখানে বিশ্বাস গড়ে ওঠে দ্বিধা থেকেই।
মঞ্চে আবার ঢুকলেন সেই চেনা মুখ—ট্রাম্প ২.০। যাকে আমরা ভাবতাম পর্দার পেছনে হারিয়ে গেছে, কিন্তু যার প্রত্যাবর্তন মানেই বিশৃঙ্খলার নবগাথা। এইবার তিনি এলেন কোনো সংকেত ছাড়াই, কূটনৈতিক কৌশলের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না রেখে—আর এসে এক ঝটকায় উল্টে দিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কয়েক দশকের পরিশ্রম। ভারতকে ঠেলে দিলেন উচ্চ শুল্কের তালিকায়—সেই তালিকা, যেখানে সাধারণত থাকে সিরিয়া, মিয়ানমার মতো দেশ। এখন ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর বসছে ৫০ শতাংশ ট্যারিফ—এটা কেবল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং একপ্রকার কূটনৈতিক অপমান।
আর বিপরীতে? পাকিস্তান পায় ১৯ শতাংশ ট্যারিফ—সেই পাকিস্তান, যেটি আজ চীনের কোল ঘেঁষে হাঁটে। শুধু তাই নয়, যৌথভাবে তেল খোঁজার নাটকীয় ঘোষণাও এসেছে, যদিও সবাই জানে—এর ফলাফল নিয়ে বেশি আশা না করাই ভালো। এর মাঝেই বাজারে ঘুরছে এক গুঞ্জন—ট্রাম্প পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিলের নাকি দহরম মহরম। কেউ কেউ বলছে, পর্দার আড়ালে কোনো লেনদেন হয়েই গেছে—রাজনীতির সেই পুরনো ‘ব্যাকরুম বারগেন’, যেখানে গণতন্ত্রের মুখোশ পরে অর্থের বেচাকেনা চলে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আদতে যেন এক ব্যক্তিগত চুক্তিপত্র—যেখানে রাষ্ট্রনীতি নয়, স্বার্থই শেষ কথা।
তার ওপর ট্রাম্প তো স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন—ভারতের অর্থনীতি “ডেড।” মৃতপ্রায়। যেন একটা দেশের সামষ্টিক চেতনা এক ঘোষণায় উধাও! অথচ বাস্তবতা বলছে একেবারে উল্টো কথা। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে তাদের অবস্থান চতুর্থ, আর ২০২৮-এর মধ্যেই তারা জার্মানিকে টপকে উঠে আসবে তিন নম্বরে—আমেরিকা ও চীনের নিচেই। ভারত শুধু অর্থনীতিতেই নয়—বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারী দেশ হিসেবেও নিজের জায়গা পোক্ত করে ফেলেছে। মানে একদিকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, অন্যদিকে বিশাল বাজার—প্রত্যেক বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রের স্বপ্ন।
তবু ট্রাম্পের চোখে ভারত এখন যেন তুচ্ছ, যেন ব্যক্তিগত কোনো অভিমান থেকে রচিত অবজ্ঞার কবিতা। প্রশ্নটা তাই কেবল কৌশলগত ভুলের নয়—এটা কি সেই পুরনো ট্রাম্পীয় নাটক, যেখানে বাস্তবতা কখনোই স্ক্রিপ্টের অংশ ছিল না? নাকি এটা এমন এক একক নাট্যকারের রচনা, যার জন্য ‘রাষ্ট্র’ কেবল এক মঞ্চ, আর বাকিরা—সবাই পার্শ্বচরিত্র?
ভারত বরাবরই একরকম ঋষির ভূমিকায় থাকতে চেয়েছে—না কারো শিবিরে, না কারো ছায়ায়। নন-অ্যালাইনমেন্ট ছিল তার স্বাধীনতাপরবর্তী পররাষ্ট্রনীতির আত্মা। কিন্তু মোদির আমলে এই নীতির এক নতুন, অ্যাক্রোব্যাটিক সংস্করণ জন্ম নেয়—মাল্টি-অ্যালাইনমেন্ট। যেন এক জিমনাস্ট রাজনীতি, যেখানে দিল্লি একসঙ্গে রাশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ, এমনকি ইরান—সবার সাথেই সুসম্পর্ক রাখতে চায়, কিন্তু কারোরই পুতুল হতে চায় না। এই ভারসাম্য রক্ষার খেলায় সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল চীনের উত্থান—যার ফাঁক গলে আমেরিকা ধৈর্য, প্রলয়হীন চাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলে ভারতকে আস্তে আস্তে নিজের কক্ষপথে টেনে আনছিল। আর ভারতও তখন বুঝতে শিখেছিল—ওয়াশিংটনের সঙ্গ মানে শুধু হাত মেলানো নয়, এটি এক কৌশলগত প্রয়োজন।
কিন্তু এখন? সবকিছু যেন আচমকাই থেমে গেছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমন যেন কূটনীতির কাচের বাড়িতে ছোঁড়া এক হঠাৎ ঢিল—শব্দ ততটা নয়, আঘাত গভীর। তিনি এলেন বিধ্বংসী কেতায়, পুরনো বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে, সম্পর্কের টান ছিঁড়ে ফেলে।
কাল যদি ট্রাম্প আবারও হাসিমুখে ফিরে এসে বলেন "Howdy Modi," হাত মেলান, নীতিতে কিছুটা শিথিলতা আনেন—তবু ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে। ভারতের মানুষের মধ্যে এখন শুধুই হতাশা নয়, বরং একধরনের আত্মসম্মানহানির ক্ষত কাজ করছে। অনেকেই ভাবছে—এই তাহলে আমেরিকার ‘আসল রূপ’? বন্ধু বলে কোল ঘেঁষে থাকলেও, দরকার পড়লেই এক নিমেষে শত্রু বানানোর ক্ষমতা? ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় এখন নতুন সুর বাজছে—রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব নয়, বরং আরও সখ্য; এমনকি চীনের দিকেও কিছুটা “নরম মনোভাব” কৌশলগত প্রয়োজনে পুনর্বিবেচনার বিষয় হতে পারে।
আর বিস্ময়ের বিষয়—এই প্রসঙ্গে ভারতীয় রাজনীতির ডান, বাম, কেন্দ্র সব শিবিরই এখন একসুরে বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। ট্রাম্পের আচরণ এমন এক বিরল ঐক্য সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক এখন এক অনিশ্চয়তার কিনারে দাঁড়িয়ে। প্রশ্ন শুধু ভবিষ্যতের নয়—বিশ্বাস, মর্যাদা আর কূটনীতির শালীনতা নিয়ে।
বর্তমানের ধাক্কাটা সাময়িক। এই ধাক্কার কারণে ভারত যতই চীনের দিকে ঘোমটা খুলুক, তিন/চারটা বড় কারণে এরা পরস্পরের 'হয় আমি নয় তুমি, দুজনে এক মাঠে নয়' সম্পর্কের বাঁধা। ট্রাম্প জমানা শেষে ভারত আমেরিকা আবার ধীরে ধীরে আগের জায়গায় ফিরে যাবে, ভারত বাঁচার তাগিদে আর চীন বিশ্বব্যাপী তার অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান নিশ্চিত করতে।