‘The Truths We Hold’: একটি রাজনৈতিক আত্মকথা?
বইটি আদৌ ভালো কি? যদি আপনি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বা সমর্থক হন, তবে বইটি আপনাকে আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু সাধারণ পাঠকের জন্য এটি নিঃসন্দেহে প্রচারণার এক সুপরিকল্পিত কৌশল বলে মনে হবে।
কামালা হ্যারিসের “The Truths We Hold” পড়তে শুরু করলে প্রথমেই বোঝা যায়, এটি স্রেফ আত্মজীবনী নয়। বইটি যখন একজন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর হাতে লেখা, তখন তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ জাগা অপ্রত্যাশিত নয়। হ্যারিস এখানে শুধু ব্যক্তিগত জীবনের গল্প শোনাননি; বরং এটি তার রাজনৈতিক দর্শন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার এক প্রয়াস, ঠিক যেমনটি আমরা অনেক প্রচারণামূলক বইয়ে দেখি।
প্রচারণামূলক বই সাধারণত যেভাবে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কামালা হ্যারিসের এই বইটির প্রতিটি অধ্যায়েও সেই প্রচেষ্টা সুস্পষ্ট। শৈশবে মায়ের কাছ থেকে অর্জিত মূল্যবোধের গল্প, যা তিনি শৈল্পিকভাবে বর্ণনা করেছেন, আসলে তার ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়কত্বের দিকে ইঙ্গিত করে। স্টেট অ্যাটর্নি ও ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার অর্জনগুলিও যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এক সুদৃঢ় মঞ্চ প্রস্তুত করছে।
বইটি পড়তে গিয়ে হঠাৎ এক ছোট গল্পে থেমে যেতে হয়—কামালা তার ছোটবেলার হস্তশিল্পের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন সেখানে। প্রথমে মনে হয়েছিল, এটি তার শখ কিংবা হস্তশিল্পের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু কয়েক লাইন পড়তেই বুঝলাম, তার আসল উদ্দেশ্য ছিল শ্রমের মর্যাদা আর পরিশ্রমের মূল্য তুলে ধরা।
এটাই প্রচারণামূলক বই আর সাধারণ আত্মজীবনীর মধ্যে মূল পার্থক্য। প্রচারণা বইয়ের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি স্মৃতিই যেন পাঠককে কোনো বৃহৎ রাজনৈতিক ধারণার দিকে নিয়ে যেতে চায়। সাধারণ জীবনীতে চরিত্রের ভুলত্রুটি, সংগ্রাম, এবং সীমাবদ্ধতার বিস্তৃত চিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু এই বইয়ে হ্যারিসের ভুল বা চ্যালেঞ্জগুলো হয় সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে, নয়তো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমবার বার পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয়বারে পাশ করার ঘটনাটি মাত্র তিনটি প্যারাগ্রাফে শেষ করেছেন; কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী লরেটা স্যাঞ্চেজের প্রসঙ্গও মাত্র তিনটি বাক্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
এখানে আরেকটি সূক্ষ্ম বৈপরীত্য লক্ষণীয়—২০১৪ সালে অভিবাসন নীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশের সময় তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নাম এড়িয়ে গেছেন। অথচ অন্য প্রসঙ্গে, যেখানে তার প্রচারণায় ওবামার সমর্থন প্রাসঙ্গিক বা সুবিধাজনক, সেখানে তাকে প্রশংসাসূচকভাবে উল্লেখ করেছেন।
সবকিছু মিলিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যায়—বইটি আদৌ ভালো কি? যদি আপনি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বা সমর্থক হন, তবে বইটি আপনাকে আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু সাধারণ পাঠকের জন্য এটি নিঃসন্দেহে প্রচারণার এক সুপরিকল্পিত কৌশল বলে মনে হবে।
বইটি পড়ার পর মনে হবে, একজন দক্ষ আইনজীবী তার যুক্তিগুলো একের পর এক উপস্থাপন করছেন, প্রতিটি বিষয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। আর সেই সিদ্ধান্তটি হলো—কামালা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত।
তবুও, এই বইয়ে এমন কিছু বাক্য পাওয়া যায় যা স্পষ্টতই রাজনৈতিক মঞ্চে হাততালি কুড়ানোর উদ্দেশ্যে লেখা। যেমন, “The American people have not given up on the American Dream… But when you can’t sleep at night, how can you dream?” অথবা, “Prescription medicines are not luxury goods. Quite the opposite. We don’t want to need them!”—যেন সরাসরি সমর্থকদের হৃদয়ে আঘাত করার মতো কথাগুলো খুব যত্ন করে বাছাই করা হয়েছে।
হ্যারিস এই বইতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার রাজনৈতিক যাত্রার রূপরেখা তুলে ধরেছেন এবং সমালোচনাগুলোর সম্ভাব্যতা অনুমান করে সেগুলো সামলানোর কৌশল দেখিয়েছেন। তার আত্মকথায় যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সুসংহত যুক্তি উঠে এসেছে, তা একদিকে বইটিকে শক্তিশালী করেছে, আবার অন্যদিকে এটি পাঠকের কাছে একটি সুপরিকল্পিত প্রচারণার ভাষণ হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে।
এইভাবেই কামালা হ্যারিসের “The Truths We Hold” বইটি পাঠকের কাছে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেয়। এটি কেবল সাধারণ আত্মজীবনী নয়; বরং এক সুচিন্তিত প্রচারণার হাতিয়ার, যা তার ভবিষ্যৎ রাজনীতির মঞ্চে অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক।