নিউ ইয়র্কের নতুন মুখ: জোহরান মামদানি ও এক শহরের পালাবদলের রাজনীতি
রিটন খান বিশ্লেষণ করেছেন কীভাবে একজন দক্ষিণ এশীয় সমাজতন্ত্রী মেয়র প্রার্থী হয়ে উঠেছেন নিউ ইয়র্কের রাজনৈতিক ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু—যেখানে আদর্শ, পরিচয় ও রাজনৈতিক শক্তির হিসাব নতুন করে লেখা হচ্ছে
মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়েছেন জোহরান মামদানি। নানান কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো পরাজয় স্বীকার করে নেওয়ার পর, মামদানির জয়টা হয়ে দাঁড়ায় এক বিস্ময়কর ঘটনা। নির্বাচনী প্রতিযোগিতা শুরুর সময় যিনি প্রায় অপরিচিত ছিলেন, সেই তরুণ প্রগতিশীল প্রার্থী শেষ পর্যন্ত কুওমোর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়ে এই নির্বাচনী লড়াই জিতে নেন।
নিউ ইয়র্ক শহরের রাজনৈতিক মানচিত্রে জোহরান মামদানির উত্থান এবং তাঁর মেয়র হওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা যেন এক নতুন সময়ের আগমনী ঘণ্টা। ২০২০ সালের জুনে, যখন গোটা শহর কোভিড-১৯ এর আতঙ্কে কাঁপছে আর রাস্তায় গর্জে উঠেছে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন, তখনই একদল ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট রাজনীতিবিদ নিউ ইয়র্ক স্টেটের আইনসভায় প্রবেশ করে, কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা পুরনো মুখদের ছিটকে ফেলে। সেই তরঙ্গেই উঠে আসেন জোহরান মামদানি—অ্যাস্টোরিয়া, কুইন্স থেকে স্টেট অ্যাসেম্বলির আসনে তাঁর অপ্রত্যাশিত জয় যেন এক প্রজন্মান্তরের ডাক।
“সমাজতন্ত্র জিতেছে”—নির্বাচনের রাতে এমন টুইট করে মামদানি শুধু বিজয়ের উল্লাস করেননি, বরং তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুকেই প্রকাশ্যে টেনে আনেন। পরদিন ‘ইনসাইড সিটি হল’-এ এরোল লুইস যখন সমাজতন্ত্র নিয়ে তাঁর অবস্থান জানতে চান, মামদানি বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করে বলেন—হ্যাঁ, তিনি একজন সমাজতন্ত্রী, এবং এটি ছিল একটি সমাজতান্ত্রিক প্রচারণা। তাঁর কথায়, এই মুহূর্তের সংকটগুলো—হোক তা কোভিড বা অর্থনৈতিক ধস—আসলে পুঁজিবাদের দীর্ঘমেয়াদি ভাঙনের লক্ষণ। সমাজতন্ত্র কীভাবে কাজে লাগবে, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, তাঁর আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল আবাসন সংকট। ফোরক্লোজারে বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা তাঁকে শিখিয়েছে, বাসস্থান কোনো পণ্যের বিষয় নয়, বরং রাষ্ট্রের উচিত নাগরিকের মর্যাদার অংশ হিসেবে তা নিশ্চয়তা দেওয়া।
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মামদানি যে নীতিগুলো সামনে এনেছেন, তা শুনলে মনে হয় যেন সাধারণ নাগরিকের টেবিলের ওপর রাখা এক তালিকা—সোজাসাপ্টা, বাস্তব, এবং জনজীবনের স্পষ্ট যন্ত্রণা থেকে জন্ম নেওয়া।
ভাড়ার লাগাম টানা: ভাড়া-স্থিতিশীল বাসিন্দাদের জন্য ভাড়া একেবারে স্থির রাখা, যেন বাড়ির ছাদের নিচে থাকার অধিকারে বাজারের খামখেয়ালিপনা না চেপে বসে।
সবার জন্য চাইল্ড কেয়ার: একটি সার্বজনীন ডে-কেয়ার প্রোগ্রামের আওতায় বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার, অর্থাৎ, কাজ আর সন্তানের দায়িত্বের মাঝখানে মায়েদের যে চিরন্তন দোলাচল, তা কিছুটা হলেও হালকা হোক।
বাস-মুক্তি অভিযান: শহরের বাস ভাড়া বিনামূল্য করে দেওয়া এবং পরিষেবা উন্নত করা—এটি মামদানি নিজেই প্রমাণ করেছেন তাঁর পাইলট প্রোগ্রামে, যেখানে দেখা গেছে চালকদের ওপর হামলা কমেছে আর নিম্নআয়ের যাত্রীরা আরও বেশি করে বাসে চড়েছেন।
আবাসন নির্মাণে পথ মসৃণ: বিশেষ করে যেসব উপ-শহর এখনো কম ঘনবসতিপূর্ণ, সেখানকার আবাসন প্রকল্পগুলো যেন সহজেই বাস্তবায়িত হয়, সেই ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
সম্পত্তি করের গোঁজামিল শেষ: শহরের পুরনো এবং অসম্পূর্ণ সম্পত্তি কর ব্যবস্থাকে আধুনিক, স্বচ্ছ ও ন্যায্য করা।
পরিবেশবান্ধব সংস্কারকে প্রণোদনা: জলবায়ু রক্ষার জন্য যে গৃহমালিক উদ্যোগ নেবেন, তাঁদের ভর্তুকি ও করছাড় দিয়ে উৎসাহিত করা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পাশে শহর: ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় জরিমানা হ্রাস করা এবং অনুমোদনের জটিলতা কমিয়ে তাদের পক্ষে একটা সহনশীল পরিবেশ তৈরি করা।
তহবিল কোথা থেকে আসবে? মামদানির জবাব সরল: কোটিপতি আর কর্পোরেশনদের পকেট থেকে। তাঁর মতে, ধনীদের ট্যাক্স বাড়ালেও তারা নিউ ইয়র্ক ছেড়ে পালাবে না—এটা এক পুরোনো ভয়ের গল্প, যা বাস্তবে খুব একটা ঘটে না। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি একটি নতুন ধরনের অর্থনৈতিক নীতির পক্ষে সওয়াল করছেন, যেখানে সরকারি মালিকানাধীন সাশ্রয়ী আবাসন এবং বাজার-দরের আবাসন—দুটোই সমান গুরুত্ব পায়। ঐতিহাসিক বাম রাজনীতির 'এক বিকল্পে সবকিছু' নীতির বদলে, মামদানির আজকের বামপন্থা আরও বহুস্বরী, যেখানে "সবই দরকার"—এই জোরাল বিশ্বাস কাজ করে।
স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে তাঁর চার বছরের যাত্রাপথও কম নাটকীয় নয়। তিনি হয়ে উঠেছেন প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর, যারা রাজনীতির মূলধারায় প্রায়শই অদৃশ্য। নিউ ইয়র্কের ট্যাক্সি চালকদের চরম ঋণসংকটের মধ্যে, যখন উবার আর লিফট এসে তাদের মাথার ওপর ঝড় তুলে দিয়েছে, তখন মামদানি ছিলেন তাদের অন্যতম দৃঢ় সহযোদ্ধা। ২০২১ সালে, তিনি ও অ্যাসেম্বলিমেম্বার ইউহ-লাইন নিওউ চালকদের সঙ্গে একযোগে অনশন করেন। ফলাফল? অনুমোদিত এক মহৎ ত্রাণ প্যাকেজ, যা অনেক চালকের জন্য তিন লক্ষ ডলারেরও বেশি ঋণ মকুব করে দেয়।
তাঁর আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল বিনামূল্যে বাস চলাচলের পাইলট প্রোগ্রাম। শুধু যাতায়াত সহজ করাই নয়, তাঁর লক্ষ্য ছিল এক দীর্ঘস্থায়ী বৈষম্য দূর করা—বর্ণভিত্তিক ভাড়া ফাঁকি ধরার নামে যে আইনগত শিকার বানানো হয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক যাত্রীদের, তাকে চ্যালেঞ্জ জানানো। ২০১৭ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে গ্রেফতার হওয়া যাত্রীদের ৯০ শতাংশই যে ওই গোষ্ঠীর মানুষ, সেই তথ্যই ছিল তাঁর আন্দোলনের কেন্দ্রে। মামদানির এই রাজনীতি যেন শহরের জনপদের গায়ে হাত রেখে স্পষ্টভাবে বলে—তোমরা বাদ পড়ো না, তোমাদের কণ্ঠস্বরও গণতন্ত্রের ভিত।
রাজনীতির হাওয়া সবসময় একই দিকে থাকে না—এ কথা মামদানির ক্ষেত্রে যেন আরও সত্য। যদিও ডিএসএ (ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা)-র পতাকা হাতে তিনি রাজ্য আইনসভায় প্রবেশ করেছিলেন, শহরব্যাপী বামপন্থার জোয়ার খুব একটা চওড়া হয়নি। ২০২১ সালে, ক্রমবর্ধমান অপরাধের পটভূমিতে, প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা এরিক অ্যাডামস মেয়র নির্বাচনে জয়ী হন—এ যেন ২০২০ সালের বিক্ষোভ-সংগ্রামের এক প্রতিক্রিয়াশীল পাল্টা উত্তর। তাঁর মেয়রশিপ শহরের বাম সংগঠনগুলোর জন্য হয়ে ওঠে কঠিন সময়, যেখানে তারা রাজ্য স্তরে কিছু সফলতা পেলেও, শহর-পর্যায়ে প্রায়ই কোণঠাসা থেকে যায়। ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি, একসময় নিউ ইয়র্কের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত, তখন লড়ছে বাজেট কাটছাঁট, লাইব্রেরি পরিষেবা এবং প্রি-কে সিট কমানোর মতো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে—কিন্তু সেই লড়াই একরকম প্রতিরোধের বেঁচে থাকা মাত্র। ২০২৪ সালের দিকে, যেই তরঙ্গ মামদানিকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিল, তা যেন নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
এই পটভূমিতেই মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার সময় মামদানি নিজের কৌশল স্থির করেন—একটি জোট গঠনের, এমন মানুষদের নিয়ে যারা নিউ ইয়র্ক শহরকে ভালোবাসেন, কিন্তু এই শহরে থাকা ক্রমশ অসম্ভব মনে করছেন। তাঁর কথায়, শহরের জীবনযাত্রার খরচ এখন "বাস্তব সংকট"—এটা আর কেবল এক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এক অস্তিত্বের প্রশ্ন, বিশেষত ব্লুমবার্গ-পরবর্তী যুগে এবং কোভিড-পরবর্তী বাস্তবতায়। তিনি যে শহরের কথা বলছেন, সেখানে গড় মাসিক ভাড়া ৩,৬৭৬ ডলার এবং চাইল্ড কেয়ারের বার্ষিক খরচ ২০১৯ সালের পরে ৪৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬,০০০ ডলার—একটা পরিবার কীভাবে সেখানে টিকে থাকবে, সেটাই এখন আসল প্রশ্ন।
তাঁর পরিচয়টাই যেন এক প্রতীক: প্রথম দক্ষিণ এশীয়, প্রথম মুসলিম, এবং অ্যাবে বিমের পর প্রথম অভিবাসী হিসেবে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। এই বহুমাত্রিক পরিচয় তাঁকে শুধু ভিন্ন ভাষা নয়, ভিন্ন ইতিহাস এবং আশা নিয়েও ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করছে। এমনকি শুধুমাত্র নির্বাচনে নয়—এ যেন এক নতুন নিউ ইয়র্ক গড়ার সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি।
র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং সিস্টেম—নির্বাচনের এই নতুন অঙ্কে মামদানির জয়ের রূপরেখা একটিই: কৌশলগত জোট। যেসব প্রার্থী শুরুতে এগিয়ে থাকবেন না, তাঁদের সমর্থকদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দ হতে পারা এখন সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই প্রেক্ষিতে সিটি কন্ট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারের সঙ্গে পারস্পরিক সমর্থনের ঘোষণা মামদানির জন্য ছিল এক বড় চাল। এটি সাদা উদারপন্থী ভোটারদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। একইসঙ্গে, সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামসের সম্ভাব্য সমর্থন মামদানিকে কালো ভোটারদের মধ্যে কুওমোর বিপরীতে একটি শক্তিশালী পয়েন্টে দাঁড় করাতে পারে।
তবে রাজনীতির ময়দান কখনোই শুধু নীতি আর কৌশলের খেলা নয়—এখানে মতাদর্শের সংঘর্ষও ধাক্কা খায় আবেগ আর বিদ্বেষে। ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোয় মামদানির বিরুদ্ধে হঠাৎ করেই খড়্গহস্ত হয়ে ওঠে মিডিয়া এবং রাজনৈতিক বিরোধীরা। তাঁর বিডিএস (বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট, স্যাংশন) সমর্থনের কারণে তাঁকে ‘ইহুদি বিদ্বেষী’ ও ‘চরম বাম’ বলে চিত্রিত করতে চায় কুওমো এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যম। অথচ, তিনি যে অবস্থান নিয়েছেন, তা এককালে নির্বাচনে 'অযোগ্যতা'র কারণ হয়ে দাঁড়াতো, কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে আমজনতার মধ্যে চিন্তাধারায় এক আমূল পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
এমনকি সিএনএন-এর এক রিপোর্টার যখন সরাসরি তাঁকে চেপে ধরেন—“ইসরায়েলের ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বের অধিকার আছে কি না”—মামদানি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, “ইসরায়েল সমান অধিকারসহ একটি রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার অধিকার রাখে।” তাঁর উত্তর যেমন পরিষ্কার, তেমনি তা প্রমাণ করে: স্পষ্ট উচ্চারণ ও নৈতিক অবস্থান কখনো কখনো সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পুঁজি হয়ে দাঁড়াতে পারে। মামদানি সেই পুঁজিকে ভয় নয়, খোলাখুলিভাবে সামনে আনছেন। এখানেই তাঁর আলাদা হওয়ার পাঠ।
এই বছরের মেয়র নির্বাচন—যতই তা একক প্রার্থী বা দলের লড়াই মনে হোক—আসলে এক যুগান্তরের প্রতিচ্ছবি। একদিকে এটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পুরনো অভ্যাসের ধারাবাহিকতা: রেকর্ড-নিম্ন জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তরুণ প্রজন্ম এবং নতুন ভোটারদের ক্ষমতায়ন না করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা। যেন ২০১৬-র ক্লান্তির পুনরাবৃত্তি—এক রাজনৈতিক গোঁড়ামি, যা আত্মরক্ষার বদলে আত্মবিধ্বংসী হয়ে ওঠে।
কিন্তু মামদানির প্রচারণা এই ক্লান্ত গল্পকে শুধু নয়, বরং তার বিপরীতে এক টাটকা এবং ঐতিহাসিক পুনর্জন্মের জায়গাও তৈরি করছে। অনেক নিউ ইয়র্কবাসী নিজেদের অগ্রাধিকার, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, নিজেদের অঞ্চলকে নিজেদের হাতে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় দেখতে পাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাইকেল ল্যাঙ্গ-এর ভাষায়, মামদানির অভিযান যেন ফিরে তাকানোর এক চেষ্টাও—যেমনটি একসময় মারিও কুওমো করেছিলেন, যখন এক বৃহত্তর উদার আন্দোলনের ভেতর থেকে উঠে এসে তিনি পরিচিতি ও জয় দুই-ই অর্জন করেন। আজ, সেই পুরনো জোটের ছায়া কুওমোর ছেলের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঠিক তেমনি, মামদানির অভিযানও এক বিকল্প ঐতিহ্য নির্মাণ করছে—যেখানে "সম্প্রদায়" আর "নাগরিক জীবন" আবার রাজনৈতিক ভাষার কেন্দ্রে ফিরে আসছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে, যেখানে ‘প্রগতি’ অনেক সময় কেবল স্কাইলাইনের পরিবর্তনে সীমাবদ্ধ থাকে, সেখানে মামদানির এই গল্প যেন আবার মানুষকে কেন্দ্র করে লেখা এক রাজনৈতিক কাব্য। পরিচয়ের, লড়াইয়ের, এবং এক শহরকে নতুন করে নিজের বলে দাবি করার কাব্য।
মামদানির জয় এখনো ‘আন্ডারডগ’ গল্পের পরের অধ্যায় হয়ে ওঠেনি, তবু তাঁর সমর্থন এক স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—নিউ ইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে জমি নড়ছে। এই তরুণ, আগুনঝরা প্রার্থী ব্র্যাড ল্যান্ডার বা জেলনোর মাইরির মতো প্রতিষ্ঠিত উদারপন্থীদের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, এবং সেটা কোনো দুর্ঘটনা নয়।
মামদানির রাজনীতি—যা কেবল ধ্বংসের প্রতিরোধ নয়, রাষ্ট্রের সক্রিয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুঁজিবাদের সর্বনাশা পরিণতিগুলোর মোকাবিলা করার রূপরেখা—তা বিনয়ী, ‘ধীরে চলো’ সংস্কারের বদলে জোরালো ও র্যাডিকাল এক কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। এটি আর কেবল ম্যানিফেস্টো নয়, এটি একটি আন্দোলনের ছক—যেখানে নীতির চেয়ে প্রবণতা, প্রস্তাবের চেয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বড় হয়ে উঠছে।
এই প্রচারণা, তার সম্ভাব্য বিজয় নয় বরং তার উপস্থিতিই, একটি নতুন দিকচিহ্ন—যেটা দেখিয়ে দিচ্ছে নিউ ইয়র্কের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে। মামদানি এখন কেবল একজন প্রার্থী নন—তিনি এক পরিবর্তনের পূর্বাভাস।
পড়ে থাকলে কৃতজ্ঞ—মতামত দিন, মন্দ হলে বলুন ভালো লাগেনি। এটাও তো আজকাল একটা মতামত, একশো শব্দের দ্যোতনাও আছে তাতে। লেখাটায় যদি আপনার হৃদকম্পন একটু হলেও অনুভূত হয়—হতেই পারে, তাহলে সাবস্ক্রিপশনের কায়দা আছে দু’রকম—একটা বিনা পয়সার আরেকটা টাকাওয়ালার, যেটা আপনার দয়ার দান। যেটা পারেন, সেটাই দিন, আমি তো এদিকে কিবোর্ড ঠুকে মরেই যাচ্ছি।
ভাল লিখেছেন।