গল্পের ইঞ্জিন
গল্পের বুনন যে তিন খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে—চরিত্র, কণ্ঠস্বর, নাটকীয়তা—সে তো জানা কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গল্পটা আদৌ থাকবে কি না, নাকি ওই খুঁটিগুলোই উল্টে গল্পের ঘাড় মটকে দেবে?
গল্পের বুনন যে তিন খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে—চরিত্র, কণ্ঠস্বর, নাটকীয়তা—সে তো জানা কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গল্পটা আদৌ থাকবে কি না, নাকি ওই খুঁটিগুলোই উল্টে গল্পের ঘাড় মটকে দেবে? এরা তিনজনে মিলে এমন এক মোহাচ্ছন্ন ম্যারাথন দৌড়ায়, যেখানে পাঠক কখনো হোঁচট খেয়ে পড়ে, কখনো শ্বাস বন্ধ করে চমৎকৃত হয়। আমি নিজে এই জিনিসগুলো নিয়ে বেশ মাথা ঘামাই। কারণ গল্প লেখাটা আর গল্প বলাটা এক জিনিস না। আমি ওরেটর, মানে মুখে মুখে ফেনা তুলতে পারি, কিন্তু লিখতে বসলে কলম এমন আচরণ করে যেন শৈশবে চুলে কেরোসিন লাগিয়ে দিয়েছে কেউ—একদম নড়ছে না।
তাই ভাবলাম, আজকের লেখায় এই তিন মহাশয় কীভাবে একে অপরের গলা ধাক্কাধাক্কি করে, গল্পের কোটরে সাসপেন্স ভরে দেয়, আর শেষমেশ পাঠকের মাথায় ঝড় তোলে, সে নিয়েই একটু আলাপ করি। যদিও আমি নিজেই জানি না, এই আলাপটা শেষমেশ কোথায় গিয়ে ঠেকবে। কারণ, গল্পের স্বভাবটাই এমন—সে ঠিক সময়ে বাঁক নেয়, কখনো পাঠককে সঙ্গে টানে, কখনো লেখককেই ঠকিয়ে ফেলে।
গল্পের কেন্দ্রবিন্দু চরিত্র। আর চরিত্রের আসল ঝামেলা হলো, এরা সহজ-সরল কিছুতেই হতে চায় না। রাগ, অনুশোচনা, উচ্চাশা, ঈর্ষা—সব একসঙ্গে মিশিয়ে এমন একটা ককটেল বানায় যে, এক ঢোঁকেই পাঠকের নেশা লেগে যায়। কিন্তু গল্পকে জমজমাট করতে হলে শুধু চরিত্রের নাম-ধাম দিলেই হবে না, এদের ভেতরের ঘূর্ণিঝড়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, স্ববিরোধিতা বুঝতে হবে। কারণ আসল গল্প তো সংঘাতে লুকিয়ে থাকে। এই চরিত্ররা একেকটা গতিশীল পদার্থবিদ্যার সূত্র—নিজেদের টানাপোড়েনে কখনও এগোয়, কখনও পিছোয়, কখনও দুমড়ে-মুচড়ে নিজেকেই নতুন করে বানায়।
আসলে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজস্ব জীবনের গল্পকার। প্রতিনিয়ত আশপাশের মানুষদের মন পড়ার চেষ্টা করি, তাদের উদ্দেশ্য আন্দাজ করি, তারপর নিজেদের সুবিধামতো গল্প ফেঁদে নিই। বাস্তব জীবনের মতোই, গল্পের চরিত্রগুলোরও একটিই স্বভাব—এরা কখনোই একরৈখিক হয় না। জটিল, ধোঁয়াশায় মোড়া, আত্মবিরোধিতায় আক্রান্ত—এমনই হয়। আর সত্যি বলতে, তার কারণেই এরা বাস্তবের কাছাকাছি, আর গল্পগুলো হয়ে ওঠে রসালো, মনোহারী, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—বিশ্বাসযোগ্য।
এবার মূল মঞ্চে তিন মহারথি—ব্যক্তি বনাম ব্যক্তি, ব্যক্তি বনাম সত্তা, আর ব্যক্তি বনাম পরিবেশ। এই ত্রয়ী সংঘাতের হাত ধরে গল্প এগোয়, ঠিক যেমন সিনেমার হিরোকে প্রথমে কুস্তির রিংয়ে ঢোকানো হয়, তারপর নিজের ভয়-ভীতি আর নীতির সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করিয়ে, শেষে প্রকৃতির মহাবিপর্যয়ের মুখে ফেলে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। নাটকীয় উত্তেজনা?
ব্যক্তি বনাম সত্তা যখন আসে, তখন গল্প এক লাফে গভীর মনস্তাত্ত্বিক স্তরে চলে যায়। মানে, নায়ককে কেবল প্রতিপক্ষের ঘুসিতেই না, নিজেরই বিশ্বাসের টানাপোড়েনেও জর্জরিত হতে হয়। তার চারপাশের পরিস্থিতি এমনভাবে সাজানো হয় যে সে বাধ্য হয় নিজের মূল্যবোধের গলা টিপে ধরতে। আর এখানেই আসল মজা—লেখক তখন গল্পের চালক থাকে না, চরিত্রই লেখককে টেনে নিয়ে চলে। একসময় সে এমন এক সিদ্ধান্ত নেয়, যা স্বাভাবিক অবস্থায় স্বপ্নেও ভাবত না। কিন্তু জীবন তো এমনই—আপনাকে এমন কিছুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে, যা আপনি সারাজীবন ধরে অপছন্দ করে এসেছেন, অথচ নিরুপায় হয়ে আপনাকেই তা করতে হবে। এই জায়গাতেই গল্প বাস্তব হয়ে ওঠে।
কিন্তু শুধু চরিত্র থাকলেই হবে না, চরিত্রের কণ্ঠস্বর লাগবে। গল্পের আসল আত্মা তো কণ্ঠস্বরেই বাসা বাঁধে। সেটা কীভাবে কথা বলে? বাক্যের ছন্দ কেমন? কোন শব্দ ব্যবহার করে? একেক চরিত্র একেক রকম কথা বলবে বলেই তো সে আলাদা। চোস্ত ইংরেজি-হাতানো কোটিপতি আর ফুটপাথের চা-ওয়ালার সংলাপ কি এক হতে পারে? কণ্ঠস্বরই চরিত্রকে সংজ্ঞা দেয়, তাকে নিখুঁত করে তোলে, তার পটভূমি, ব্যক্তিত্ব আর আবেগ ফুটিয়ে তোলে। তাই তো কখনও কখনও চরিত্র এমনভাবে কথা বলে যে মনে হয়, গল্পের লাগাম আর লেখকের হাতে নেই, চরিত্র নিজেই লিখতে বসেছে!
একজন অভিনেতা যখন চরিত্রে ঢোকেন, তখন শুধুই সংলাপ আওড়ান না—নিজের অভিজ্ঞতার রস নিংড়ে দেন, শিরদাঁড়ায় ঢুকিয়ে নেন চরিত্রের ভয়, আকাঙ্ক্ষা, দ্বিধা। লেখকের ক্ষেত্রেও তাই। তাকে শুধু গল্পের চরিত্র তৈরি করলেই হবে না, তার কণ্ঠস্বরের ভেতর ঢুকে, তাকে সম্পূর্ণভাবে "জীবিত" করে তুলতে হবে। লেখা মানে কি শুধু শব্দ বসানো? মোটেই না! লেখা মানে হলো নিজের ভেতরের ব্যাগড়া, জ্বালা, শঙ্কা—সব এনে ছুঁড়ে মারা।
একজন ঔপন্যাসিক চরিত্রের গলায় কথা না বলতে পারলে, সেই চরিত্র কাগজে থেকে যাবে, মানুষের মনে ঢুকতে পারবে না। তাই লেখকের কাজ হলো চরিত্রের কণ্ঠস্বরকে বিশ্বাসযোগ্য করা। শুধু বিশ্বাসযোগ্যই না, চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর বাইরের সংঘাতের সঙ্গেও তা মানানসই হতে হবে। যেমন ধরুন, এক কন্ট্রাক্ট কিলার যদি শেক্সপিয়ারীয় ভাষায় প্রেমপত্র লেখে, তাহলে পাঠক সেটাকে প্রেম নয়, পরিহাস হিসেবে নেবে। তাই, ভাষা মানেই কেবল কথার বাহন না, ভাষা নিজেই চরিত্রের শ্রেণি, শিক্ষা আর আবেগের সূক্ষ্ম মানচিত্র এঁকে দেয়।
একজন মানুষ কীভাবে কথা বলে, সেটাই বলে দেয় সে কোথা থেকে এসেছে, কীসে বিশ্বাস করে, আর কোন পরিবেশে তার ঠাঁই হয়েছে। আপনার ব্যবহৃত শব্দই বলে দেয়, আপনি পার্ক স্ট্রিটের ক্যাফেতে এসপ্রেসো খাচ্ছেন, না লালবাজারের ফুটপাথে চা-ডিমটোস্টে জীবন কাটাচ্ছেন। তাই, গল্পের চরিত্রের মুখে ভাষা বসানোর সময় লেখকের কাজ হলো একদম শল্যচিকিৎসকের মতো নিখুঁত হওয়া—একটা শব্দ এদিক-ওদিক হলে, পুরো চরিত্রটাই ভেস্তে যেতে পারে।
গল্পের নাটকীয়তা মানেই সেই মশলা, যা না থাকলে গল্প শুকনো রুটির মতো মুখে বালির স্বাদ ধরাবে। পাঠক গল্পে লাফিয়ে ঢুকে পড়তে চায়, কিন্তু যদি সেখানে উত্তেজনার চোটে হৃৎপিণ্ড লাফাতে না থাকে, তাহলে গল্প রাস্তায় পড়ে থাকা ছেঁড়া পোস্টারের মতো—কারোর চোখই তাতে আটকে থাকবে না। নাটকীয়তার আসল জন্ম সংঘাত থেকে, সেটা চরিত্রের ভেতরে হোক বা বাইরের দুনিয়ায়। আর এই সংঘাত যত গভীর হয়, তত গল্পের মজা বাড়ে। আপনি বলুন তো, একটা লোক সন্ধ্যেবেলায় ঠান্ডা কফি হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে—এতে গল্প হবে? না। কিন্তু সেই লোক যদি হঠাৎ জানতে পারে, তার কফির কাপের তলায় লুকানো আছে তার ধ্বংসের পূর্বাভাস—এখন কি গল্প জমলো?
সিনেমায় যেমন ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল ঠিকঠাক না বসলে সিনের সব রস নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি গল্পের কাঠামোও নাটকীয়তার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গল্পের উত্তেজনাকে চারটে স্তরে ভাঙা যায়।
প্রথমত হুক—গল্পের সেই বিস্ফোরণ, যা প্রথম বাক্যেই পাঠককে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। এই জায়গায় পাঠককে এমন কিছু দিতে হবে, যাতে সে গল্প ফেলে টয়লেটেও না যায়। এরপর আসে বিবরণ—এই পর্বে চরিত্র আর পরিবেশ ধীরে ধীরে মঞ্চে নামে, কিন্তু গল্প যেন খালি ভূমিকা পর্বে আটকে না থাকে।
তৃতীয় স্তরে সংঘাত তীব্র হয়—এটাই সেই জায়গা, যেখানে চরিত্রদের গলা চেপে ধরা হয়, জীবন তছনছ হয়ে যায়, আর পাঠক নখ কামড়াতে শুরু করে। সব শেষে চূড়ান্ত মুহূর্ত—যেখানে উত্তেজনা এমন জায়গায় পৌঁছায়, যে পাঠক মনে করে, "এখন যদি জানি না, কী হয়, তাহলে মরে যাব!"
আর তারপর? উপসংহার—যেখানে চরিত্রদের হাতে গল্পের চাবি ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা হয় নতুন বাস্তবতাকে মেনে নেয়, নয়তো ধ্বংস হয়। পাঠক তখন গল্পের পাতা বন্ধ করে বলে, "আহা, বাপরে!" অথবা, "এই কাহিনি আমার মাথায় ঘুরছে, ঘুম আসবে না!" আর লেখকের আসল কাজ এখানেই। পাঠককে এমন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া, যেখান থেকে ফেরার পথ সহজে পাওয়া যায় না।
বাক্য লেখার কাজটা নিছক শব্দ জোড়া দেওয়া নয়, বরং দড়ির ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো। একটু এদিক-ওদিক হলে পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙার সমূহ সম্ভাবনা। একটা বাক্যের ছন্দ কেমন হবে, গতি কতটা দ্রুত বা মন্থর হবে, কোন শব্দ ঝাঁকুনি দেবে আর কোনটা ফিসফিসিয়ে মনে গেঁথে যাবে—এসব নিয়ে লেখককে ঠিক ততটাই খুঁতখুঁতে হতে হয়, যতটা জুয়েলারি দোকানের সোনা মাপার পাল্লা।
কাজেই, লেখালেখি হচ্ছে একটা নিরবচ্ছিন্ন অপারেশন টেবিল। কাটাকাটি হচ্ছে সেই অস্ত্রোপচার, যেখানে লেখক তার প্রথম খসড়ার সব ফালতু চর্বি ফেলে, হাড়ে-মজ্জায় নিখুঁত শেপ দেয়। যে লেখক কাটাকুটিকে ভয় পায়, সে আসলে নিজের লেখাকে জীবিত করতে চায় না—সে গল্প নামক শবদেহকে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখতে চায়। আর তাতে পাঠকও পড়তে গিয়ে মনে করবে, "এ কাকে নিয়ে বসলাম!"
শেষ পর্যন্ত, গল্প আসলে তিনজন কুশলী খেলোয়াড়ের যুগলবন্দি—চরিত্র, কণ্ঠস্বর, আর নাটকীয়তা। চরিত্রকে তার আরামের জায়গা থেকে ঠেলে বের না করতে পারলে, সে ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যাবে। কণ্ঠস্বর যদি সত্যিকারের না শোনায়, তবে তা হবে স্ট্রিট ফুডের নামী দোকানে গিয়ে বাসিরুটি খাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা। আর নাটকীয়তা যদি ঠিকঠাক না থাকে, তবে গল্প পড়ে মনে হবে, গরম চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে তোলার আগেই গলে গেছে।
এখানেই গল্পের আসল শক্তি। আপনি একটা চমৎকার যুক্তি দিয়ে মানুষের মত পাল্টাতে পারবেন না। তারা তর্ক করবে, উত্তর দেবে, গোঁ ধরে বসে থাকবে। কিন্তু গল্প? একটা ভালো গল্প মানুষের বুকের ভেতর ঢুকে তাকে কাঁপিয়ে দিতে পারে, ভাবিয়ে তুলতে পারে, এমনকি তার বিশ্বাসও বদলে দিতে পারে। তাই গল্প বলাটা নিছক বিনোদন নয়, বরং এটাই একমাত্র মাধ্যম, যার সাহায্যে আমরা শুধু অন্যদের নয়, নিজেদেরও নতুন করে চিনতে শিখি।
লেখালেখি নিছক কেরামতি নয়, বরং এক দুনিয়া-গড়ার ম্যাজিক। এখানে চরিত্র, কণ্ঠস্বর, আর নাটকীয়তা—এই তিন বন্দুকধারী যদি নিজেদের কাজ ঠিকঠাক করে, তবে গল্প বেঁচে থাকে। আর যদি একজনও গাফিলতি করে, তবে গল্প পাতা থেকে পিছলে নর্দমায় পড়ে যায়।
একজন দক্ষ লেখকের কাজ হলো এমন লেখা তৈরি করা, যা শুধু পাঠকের চায়ের সঙ্গে বিস্কুটের মতো গিলে ফেলার জন্য নয়, বরং তার মগজে এমনভাবে গেঁথে দেয়, যাতে সে মনে মনে বলে—“এই গল্প আমাকে কিছু করিয়ে ছাড়বে!”
গল্প আসলে একটা আয়না। তবে সে ইনস্টাগ্রাম ফিল্টার লাগানো সেলফির আয়না নয়, বরং এমন একটা কাঁচ, যা আমাদের নিজেদের দিকে এমনভাবে ঘুরিয়ে দেয়, যে আমরা দেখতে পাই—আমরা আসলে কারা, কিসের জন্য লড়ছি, কোথায় নিজেদের ঠকাচ্ছি।
একটা ভালো গল্প কখনোই শুধু বিনোদনের জন্য নয়। এটা পাঠকের সঙ্গে এক গভীর দার্শনিক হাতাহাতি করে। এটা পাঠকের মনের এক কোণে গিয়ে জিজ্ঞেস করে—“এই যে জীবনটা চালিয়ে যাচ্ছ, আদৌ জানো কি, কেন?” গল্প মানে শুধুই টুইস্ট আর ক্লাইম্যাক্স নয়। গল্প মানে পাঠকের মনের দরজায় ধাক্কা দেওয়া, আর দরজাটা খুলতে বাধ্য করা।
গল্পের চরিত্রেরা আমাদের জীবনের নতুন দরজা খোলে, আমাদের মুখের ওপর আমাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি ছুঁড়ে দেয়। আমরা ভাবি, ‘আরে, এ তো আমার মতোই!’ অথবা ‘এটা আমার সঙ্গেই ঘটতে পারত!’ অথচ আমাদের ব্যস্ত জীবন, অফিসের বসের মন ভালো রাখার তাগিদ, ভাড়া-বাড়ির দেয়ালের ক্লান্তিকর রঙ—এসবের ফাঁকে আমরা কখনোই বুঝতে পারি না, কোথায় কোথায় আমরা নিজেদের ভুলতে বসেছি। গল্পের সৌন্দর্য এখানেই। সে এসে বলে, ‘এটা দেখেছিস?’, আর আমরা অবাক হয়ে দেখি, জীবনের বহু উপেক্ষিত সত্য আমাদের সামনে পড়ে আছে, যেগুলো আমরা হয়তো পাত্তাই দিইনি।
গল্প শুধু বিনোদন নয়, সে আমাদের শেখায়, কষ্ট কীভাবে দেখতে হয়, আনন্দের ফাঁকফোকর কেমন, আর জীবনের সমস্ত গোলমাল একসঙ্গে রাখলে কেমন লাগে। অমুক গল্পের তমুক চরিত্রের সমস্যার মধ্যে আমরা নিজেদের বিপদ খুঁজে পাই, আর হয়তো একটা সমাধানের আভাসও মেলে। একারণেই গল্প পড়া মানে নিজের জীবনকে নতুনভাবে দেখা, একটু দূর থেকে, যেন সিনেমার ক্লাইম্যাক্স দেখছি—কিন্তু এবার ক্যামেরার অপর প্রান্তে আমরাই বসে আছি।