বিরহিলিওর মৃত্যু - গিয়ের্মো ক্যাব্রেরা-ইনফান্তে
এক প্রবল উদ্দীপনায় আমরা কলম চালিয়ে যাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই শব্দগুলো একে অপরের সঙ্গে গুলিয়ে যায়, অক্ষরগুলো একাকার হয়ে যায়, শেষমেশ আমরা আর কিছুই বুঝতে পারি না। আমরা শৈশবে ফিরে যাই—যেন মুখভর্তি লজেন
ভূমিকা
এই উত্তপ্ত সময়ে, Cold Tales বা "ঠান্ডা গল্পগুলো" হয়তো বেশ কার্যকর হবে। পাঠক যখন এদের মুখোমুখি হবেন, বুঝতে পারবেন এই ঠান্ডা আসলে বিভ্রমমাত্র—এগুলো ভয়ানকভাবে উত্তপ্ত। লেখক নিজেই যেন চুল্লির ভেতর বন্দি, এবং তার মতোই, তার চারপাশের মানুষরাও দহনের শিকার—এক নরকে, যা তিনি নিজেই নির্মাণ করেছেন।
এই গল্পগুলো ঠান্ডা, কারণ এগুলো কেবল কঠিন বাস্তবতাকেই ধরে রাখে। লেখক বিশ্বাস করেন, জীবন কাউকে পুরস্কৃত করে না, শাস্তিও দেয় না; দোষী সাব্যস্ত করে না, উদ্ধারও করে না—অথবা আরও নির্দিষ্ট করে বললে, এই জটিল বিভাজনগুলোকে স্বীকৃতিও দেয় না। তিনি শুধু বলতে পারেন যে তিনি বেঁচে আছেন, নিজের কর্ম বিচার করার দায় তার নেই, তাদের কোনো অর্থ দেওয়ারও প্রয়োজন নেই, কিংবা জীবনের শেষ প্রান্তে ন্যায়ের প্রত্যাশা রাখারও কোনো অর্থ হয় না।
বরং, এক প্রবল উদ্দীপনায় আমরা কলম চালিয়ে যাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই শব্দগুলো একে অপরের সঙ্গে গুলিয়ে যায়, অক্ষরগুলো একাকার হয়ে যায়, শেষমেশ আমরা আর কিছুই বুঝতে পারি না। আমরা শৈশবে ফিরে যাই—যেন মুখভর্তি লজেন্স নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা একদল শিশু। তারপর, হঠাৎই, এক রহস্যময়, অবিন্যস্ত, অথচ স্বতঃস্ফূর্ত ধ্বনি ফেটে পড়ে:
"বা, বা, বা, বা..."
ভাষান্তরঃ রিটন খান
একজন লেখকের জীবনী ইতিহাস হতে চায়, অথচ বিরহিলিও পিনেরার ক্ষেত্রে তা গসিপের ছেঁড়া সুতোর গাঁথুনি হয়ে ওঠে—এক ধরনের মিথ। বিশেষত সংক্ষিপ্ত জীবনীতে বাস্তবতা চাপা পড়ে কল্পনার আড়ালে, যেখানে ছোট ছোট উপাখ্যান, গসিপ ও অ্যানেকডোট মিলিয়ে গড়ে ওঠে এক বিকৃত বাস্তবতা।
বাস্তবতা নিজেই প্রশ্নসাপেক্ষ, কারণ তা জীবন থেকে একধাপ দূরে থাকা প্রতিফলন মাত্র। বাস্তববাদ আসলে ফরাসি বিপ্লবের পর শিল্পে রাজনীতির অনুপ্রবেশের ফল। বিরহিলিও পিনেরা—বন্ধুদের কাছে শুধু বিরহিলিও, আর শত্রুদের (যাদের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না) কাছে ‘পেডেরাস্ট পিনেরা’—বাস্তবতার আড়ালে একেবারেই অবাস্তব এক জীবন যাপন করতেন। শিল্পের পরিসর ছাড়া যেন তার বাস্তবতার কোনো অস্তিত্বই ছিল না। আর তার লেখাগুলো যেন প্রান্তিক জীবনের পাশে দাঁড়ানো টীকা—বিচ্ছিন্ন, এলোমেলো, তবু তীব্র ও গভীর।
খুব কম মানুষই নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, “আমার জীবন এক উন্মুক্ত বই,” এবং সঙ্গে সঙ্গে যোগ করতে পারেন, “আমার বই-ই আমার উন্মুক্ত জীবন।” পিনেরা ঠিক সেভাবেই বেঁচেছিলেন—লেখার জন্য, আর লেখার মধ্যেই তার অস্তিত্ব।
তিনি মারা গেছেন—এ এক অনিবার্য বাস্তবতা, দুঃখজনক হলেও অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু মানুষ বিরহিলিও হয়তো অস্তমিত, লেখক বিরহিলিও এখনো জীবন্ত—যিনি শুধুই নামে নয়, প্রকৃত অর্থেই এক পুরোদস্তুর সাহিত্যিক। জীবদ্দশায় যেভাবে বারবার আঘাত সহ্য করতে হয়েছিল, মৃত্যুর পরেও তার লেখাকে ঘিরে সেই বিতর্ক থামেনি। বাস্তবে যেমন নিগৃহীত হয়েছিলেন, তার সাহিত্যও তেমনি টানাহেঁচড়ার শিকার। একসময় তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছিল চে গুয়েভারার হাতে—হ্যাঁ, সেই চে, যাকে বিশ শতকের হলিউড রূপ দিয়েছিল El Che-তে।
মৃত্যুর আগে বিরহিলিও তার বৃদ্ধ, অন্ধ পিতার প্রয়াণকে একপ্রকার মুক্তি হিসেবে দেখেছিলেন—কিন্তু তা কোনো ঐতিহ্যবাহী ওডিপাসীয় জটিলতার অবসান ছিল না। বরং, ওডিপাসের প্রসঙ্গ তুললে এখানে এক বিপরীত সত্যের মুখোমুখি হতে হয়।
তার বোন লুইসা—Aire frío নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্রের অনুপ্রেরণা—ছিলেন এক শিক্ষিত নারী, অথচ বিয়ে করেছিলেন এক নিরক্ষর বাসচালককে। যেন Blanche DuBois নিজেই হয়ে গেলেন Stanley Kowalski-র স্ত্রী! তাদের মধুচন্দ্রিমা কেটেছিল অন্তহীন বাসযাত্রায়, যেখানে লুইসা চালকের ঠিক পেছনের আসনে বসতেন—যেন শারীরিক দূরত্বেই বন্দী রইল বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবধান।
মা যখন মেয়ের এমন বিয়ে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, বিরহিলিও স্বভাবসুলভ রসবোধে পরিস্থিতি সামাল দেন। “উজ্জ্বল দিকটা দেখো, মা,” বলেন তিনি—যিনি নিজেও নিম্নবর্গের প্রেমিকদের প্রতি দুর্বল—“তোমার জামাইকে ভাবো এক অর্কেস্ট্রা খোঁজার সন্ধানে থাকা কন্ডাক্টর হিসেবে!” তারপর বোনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে যোগ করেন, “এবার তোমার পালা।”
বিরহিলিও যখন প্রতিদিনের মতো তার অন্ধ বাবাকে হাত ধরে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেন, লুইসা হেসে বলতেন, “ওডিপাস আর অ্যান্টিগোনে চলে আসছে।” যেন ওডিপাস নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছেন—সবকিছু শেষ পর্যন্ত পরিবারের মধ্যেই রয়ে যায়!
প্রকাশ্য সমকামী হওয়ায় উপেক্ষিত এবং সেই পরিচয় নির্ভয়ে বহন করার ফলে, বিরহিলিওকে আর্জেন্টিনায় পালাতে হয়েছিল। সেখানে তিনি শুধু ভিতল্ড গমব্রোভিচের Ferdydurke-এর অনুবাদক হননি (যদিও পোলিশ ভাষা জানতেন না), বরং হোর্হে লুইস বোর্হেসের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন একজন সত্যিকারের মৌলিক সাহিত্যিক হিসেবে।
পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে কিউবায় ফিরে এসে তিনি একদিকে হয়ে উঠলেন সাহিত্যগুরু, আবার অন্যদিকে প্রায় এক অচেনা মানুষ। চল্লিশের দশকের গোড়ায় লেসামা লিমার সঙ্গে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আর কয়েক দশক পর আরেকটি পত্রিকার জন্ম দিলেন—এইবার লেসামার বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানাতে। বিরহিলিও ছিলেন এক প্রকৃত বিদ্রোহী সত্তা, এক বিপরীতমুখী চরিত্র, যিনি কখনোই কোনো নির্দিষ্ট ঘরানায় স্থির থাকেননি।
বিপ্লবের পর বিরহিলিও জনপ্রিয় লেখালেখির মূলধারায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলেন। প্রথমে Revolución, তারপর এর সাহিত্য পরিশিষ্ট Lunes—যা একসময় প্রতি সপ্তাহে আড়াই লাখ কপি ছাপাতো—সেখানে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করলেন। কিন্তু খুব দ্রুতই তিনি এক ‘অত্যধিক পরিচিত’ বিশৃঙ্খল সমকামী হিসেবে চিহ্নিত হলেন এবং তার নির্মম পরিণতির শিকার হলেন।
১৯৬১ সালের ১১ অক্টোবর ভোররাতে, তাকে তার সমুদ্রতীরবর্তী কটেজ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়—তার জীবনের প্রথম নিজস্ব বাড়ি। তবে তিনি বন্দি হন নৈরাজ্যবাদী হওয়ার জন্য নয়, বরং সমকামী হওয়ার অপরাধে। যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, তিনি বলেননি যে বিরহিলিও “সমকামীর ভান করছিলেন,” আর বিরহিলিওও সুযোগ পাননি তার এক রাতের সঙ্গীকে ওস্কার ওয়াইল্ডের কুখ্যাত উক্তির ছায়ায় বিদ্রূপ করে বলতে—“রাজনৈতিক পুলিশরা কখনো বানান ঠিকঠাক করতে পারে না।”
এর বিপরীতে, এই সংক্ষিপ্ত কারাবাস তাকে এমনভাবে ভেঙে দিল, যা দারিদ্র্যের দীর্ঘ প্রতিকূলতাও পারেনি। এক পরিচিত উচ্ছৃঙ্খল চরিত্র থেকে তিনি হয়ে উঠলেন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন, এক নেতিবাচক নায়ক—যে ধ্বংসের জন্যই যেন নির্ধারিত, যে কখনোই স্বাভাবিক নায়কের ভূমিকায় আসতে পারবে না।
এই নিগ্রহ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে ১৯৬৪ সালে। আলজিয়ার্সে কিউবান দূতাবাসের ছোট লাইব্রেরি ঘেঁটে চে গুয়েভারা খুঁজে পান বিরহিলিওর Teatro Completo এবং রাগে ফেটে পড়ে সেটি দেওয়ালে ছুড়ে মারেন। দূতাবাস কর্মকর্তাকে ধমক দিয়ে বলেন, “আমাদের দূতাবাসে এই জঘন্য সমকামীর বই রাখার সাহস কীভাবে হলো তোমার?”
স্প্যানিশ লেখক হুয়ান গোইতিসোলো এই অদ্ভুত ‘চূড়ান্ত শুদ্ধি অভিযানের’ প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন। সে মুহূর্তে তিনি নিশ্চুপ ছিলেন, কিন্তু পরে সকলকে বলে বেড়িয়েছিলেন ঘটনার বিবরণ। এভাবেই, বিরহিলিও শেষ পর্যন্ত ওস্কার ওয়াইল্ডের কুখ্যাত খ্যাতির সমান্তরালে দাঁড়িয়ে গেলেন—একজন লাঞ্ছিত, নিন্দিত, কিন্তু একই সঙ্গে শোকস্তব্ধ ও অমর রূপকথার নায়ক।
সেই মুহূর্ত থেকে বিরহিলিও এক অভিশপ্ত মানুষে পরিণত হলেন, যদিও তাকে আর কখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। ১৯৬৫ সালের বসন্তে প্যারিসে, মিরিয়াম গোমেজ যখন তাকে শেষবারের মতো দেখলেন, তিনি তখন এক দিকভ্রান্ত চড়ুইয়ের মতো—অস্থির, লক্ষ্যহীন, বাতাসে দুলতে থাকা এক ভগ্ন সত্তা।
এক পুরনো বন্ধু তাকে সতর্ক করেছিলেন কিউবায় না ফেরার জন্য, কারণ তখন সমকামীদের ‘অসঙ্গত আচরণের’ অভিযোগে বন্দিশিবিরে পাঠানো হচ্ছিল। তবু তিনি হাভানায় ফিরে এলেন, দেশপ্রেমের আবেগে কিউবার মাটিতে চুমু খেতে চাইলেন—কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেন।
তার ঠোঁট কিউবার মাটিতে নয়, বরং রানওয়ের কঠিন পিচে গিয়ে ঠেকল—একেবারে এক Virgilian travesty! বাস্তবের নির্মম পরিহাসে, যে কঠোর কালো পিচে তিনি চুমু খেলেন, সেটিও ছিল রাশিয়ান টার দিয়ে তৈরি—কিউবার মাটির বদলে পরাধীনতার এক নতুন প্রতীক।
আমি যখন মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য বেলজিয়াম থেকে কিউবায় ফিরলাম, তখন শোক যেন বাস্তবতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল। কয়েকদিন পর বিরহিলিও তার পিতাকে সমাহিত করলেন—অন্ধত্ব এবার চিরস্থায়ী অন্ধকারে রূপ নিল। তবু বিরহিলিওর জন্য জীবন যেন স্বাভাবিক নিয়মেই বয়ে চলল, অন্তত বাহ্যিকভাবে।
স্বাভাবিক বলতে যা বোঝায়, বিরহিলিওর ক্ষেত্রে তার অর্থ ছিল প্রতিদিন সকালে লেখালেখিতে ডুবে থাকা—জেনেও যে তার লেখা কখনোই প্রকাশিত হবে না, আর বাকি সময় নিজের পুরুষালি উপস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করা। এটি এক অসীম সাহসের পরীক্ষা, কারণ তিনি জানতেন তার ভবিতব্য আগেই স্থির হয়ে গেছে। যদিও তাকে বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়নি, যেমনটা হয়েছিল তার বহু সমকামী বন্ধুর ক্ষেত্রে, তবু তিনি জানতেন—তিনি অভিশপ্ত।
তারপর, হঠাৎ করেই, তিনি আর রইলেন না।
বিরহিলিও—নিরামিষভোজী, অত্যন্ত রোগা, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনকারী; এমনকি দশকের শুরুতেই ধূমপানও ছেড়েছিলেন। তবু, তিনি মারা গেলেন হৃদরোগে। আমার সন্দেহ, তাকে হত্যা করেছিল ভয়।
তিনি প্যারানয়িড ছিলেন না, কিন্তু বসবাস করছিলেন এক স্থায়ী Paranoia-য়—এক পুলিশি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে, যেখানে ভয়ই ছিল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাস্তবতা।
তিনি রেখে গেছেন এক বিশাল সাহিত্যভাণ্ডার, যার মধ্যে প্রায় দশটি নাটক রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তিনি শুধু অদৃশ্যই ছিলেন না, ছিলেন এক নির্বাক সত্তা। শেষ পর্যন্ত, তিনি যা চেয়েছিলেন তা-ই যেন অর্জন করলেন—একেবারে invisible man হয়ে গেলেন।
এই সংকলিত ছোটগল্পের সংকলন (এবং কিছু তেমন ছোট নয়) তার মৃত্যুর পর যে নীরবতা তাকে গ্রাস করেছিল, তা ভাঙার একটি প্রচেষ্টা। একইসঙ্গে, এটি তার বিতর্কিত খ্যাতিকে—যে খ্যাতি তাকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিদ্বেষের কেন্দ্রে পরিণত করেছিল—বাস্তব স্বীকৃতিতে রূপান্তরিত করার একটি প্রয়াস।
এখানে রয়েছে সেই গল্পগুলো, যেগুলো বোর্হেস একসময় প্রশংসা করেছিলেন (Cuentos fríos নামে এই সংকলনের এক প্রাথমিক রূপ ১৯৫৫ সালে বুয়েনোস আইরেসে প্রকাশিত হয়)। এসব গল্পকে বলা যেতে পারে cuentos absurdos—আইনেস্কোর নাটকের অনেক আগেই রচিত। এগুলো এমন এক অন্ধকারময় রসবোধে পরিপূর্ণ, যা লেখকের নিজ জীবনকেও ছাপিয়ে যায়—এক সত্যিকারের travesty।
এই গল্পগুলোয় মিথ এক রূপকে পরিণত হয়—দীর্ঘ দারিদ্র্য, প্রত্যাখ্যান, ও ভয়ের প্রতীক হয়ে, যা শুধু সাহিত্য নয়, বরং বিরহিলিও পিনেরার সম্পূর্ণ অস্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করে।
যদি বলি, এই গল্পগুলো পড়লে আপনি এক প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভব করবেন, তবে আমি শ্যাম্পেন বা কোকেইনের উত্তেজনার কথা বলছি না। আমি বলছি এক নির্মম আঘাতের কথা—একটা অপ্রত্যাশিত লাথি। কখনো তা তলপেটে, কখনো পাকস্থলীতে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় তা আত্মায় গিয়ে আঘাত করে—সেই গভীরে, যেখানে যন্ত্রণা দার্শনিক হয়ে ওঠে, আর রক্তপাত কখনোই থামে না।
একজন সচ্ছল পাঠকের মতো আমিও বিব্রত—বিরহিলিওর গ্রন্থাগারে আমার কোনো বিশেষ প্রিয় বই নেই। যেকোনো পৃষ্ঠা খুললেই বোঝা যাবে, এই গল্পগুলো মপাসাঁর কল্পনার চেয়ে কত দূরের, আর ঠিক তেমনটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এগুলো চিভারের ঠান্ডা শিহরণ থেকেও দূরে, ও’হারা (ওহ, ভয়াবহ!) কিংবা সেই হেমিংওয়ের বাস্তববাদ থেকেও, যিনি বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকান কথাসাহিত্যে এত প্রভাবশালী। নোবেল পুরস্কারের বাসনা থাকলে হয়তো তেমনটাই হওয়া উচিত ছিল!
তবে বিরহিলিওর গল্পগুলো বোর্হেস বা অন্য যে কোনো সাহিত্যিকের ভাবনার সীমানার বাইরেও অবস্থান করে। কারণ এগুলো এসেছে এক চূড়ান্ত বিচ্ছিন্নতার অভিজ্ঞতা থেকে—এক অচেনা বাস্তবতা থেকে, যেখানে নরকের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথ স্বর্গের মধ্য দিয়ে নয়, বরং এক অন্তহীন পরিশুদ্ধির আগুন (purgatory) অতিক্রম করেই যেতে হয়।
লন্ডন, ২৬ জুলাই, ১৯৮৮